বিএনপির সঙ্গে একই জোটে না থাকার বিষয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দলটির একটি রুকন সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে উৎফুল্ল হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। বলেছেন, বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে।
জামায়াত নেতা তার দলের কুমিল্লা শাখার নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায় যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে এলেও বিএনপি ও জামায়াতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।
এর মধ্যে রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন আব্দুর রহমান। জাতীয় শোক দিবস স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ।
আবদুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে, জামায়াতে ইসলাম বলেছে— বিএনপির সঙ্গে তারা আর নেই।’
১৯৯৯ সালে বিএনপি ও জামায়াত জোট গঠনের দুই বছর পর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে হেরে যায়, যদিও দলটির ভোট বাড়ে প্রায় চার শতাংশ।
সে সময় আওয়ামী লীগের আসন ছিল ৫৮টি আর বিএনপি ও জামায়াতের আসন দুই শ ছাড়ায়। দেড়শর মতো আসনে আওয়ামী লীগ হারে ৫ থেকে ১৫ হাজার ভোটে। ধারণা করা হয়, জামায়াত, জাতীয় পার্টির একাংশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভোট যোগ হওয়ায় এই ফলাফল হয়।
তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে নিয়েও বিএনপির ভরাডুবি হয়। তাদের আসন নেমে আসে ৩০ এক ঘরে।
এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াতের জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তবে বিএনপি ভোটের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে জোট ভাঙার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। গত বছরের শুরুর দিকে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি কার্যকর করতে পারেনি। তবে শফিকুর জানিয়েছেন, দুই পক্ষ আলোচনা করেই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, তারা এক জোটে না থেকে যুগপৎ আন্দোলন করবে।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নামক বলেন, ‘বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকতে সংখ্যালঘু নির্যাতন নারী নির্যাতন জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসসহ দেশে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল এদেশের মানুষ তা ভুলে যায়নি।’
আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি নৈরাজ্য করে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নৈরাজ্য করলে ছাত্রলীগ বসে থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। জিয়াউর রহমান বিচারপতি সায়েমের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। ১৯৯১ সালে দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রে কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছে। ২০০১ সালে ভারতকে এদেশের গ্যাস রপ্তানি করবে মুচলেকা দিয়ে এসেছে।’
র্যাব বিএনপি সৃষ্টি করেছিল উল্লেখ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ বাবুকে প্রথম গুম করে বিএনপি। বিএনপি চট্রগ্রামে নিজেদের নেতা জামালকেও গুম করে, ৪২ দিনের মাথায় তার লাশ পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিশেন আসলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ভাবলেন তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে। তারা যখন বলছে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংকট নেই তখন বিএনপির মুখ এখন চুপসে গেছে।
‘ভারতে নরেন্দ্র মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন খালেদা জিয়া মেকাআপ করে তৈরি হয়ে গেলেন, যেন এবার তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে। তারপর ভাবলেন, হিলারি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তাকে ক্ষমতায় বসাবে।’
প্রধান অতিথি বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ভাইয়ের সামনে বোনকে রেপ করেছে, পিতার সামনে কন্যাকে রেপ করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সবাইকে নিরাপদ রেখেছেন।
‘বিএনপি ও তারেক জিয়া ক্ষমতায় থেকে কিবরিয়া সাহেবকে হত্যা করেছে, আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করেছে, নাটোরে মমতাজ উদ্দিনকে হত্যা করে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।