বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রলারডুবি: নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় বাড়ছে জেলে নিখোঁজের সংখ্যা

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১০:৪৫

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম আকন জানান, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার। এ ছাড়া বরিশাল অঞ্চলের ১১৪ জেলে ভারতে আটক রয়েছেন। খোঁজ মেলেনি ৩০টি ট্রলারের।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে অর্ধশতাধিক জেলেসহ ট্রলারডুবির খবর পাওয়া গেছে। আর এতে নিখোঁজের সংখ্যাও কম নয়। অনেক জেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বেশির ভাগ জেলেরই কোনো হদিস মিলছে না। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন জেলেরা।

ট্রলারগুলোতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় জেলে নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বরিশাল অঞ্চলের দেড় শতাধিক জেলের এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি।

চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে অধিকাংশ ট্রলারডুবির ঘটনা ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম আকন জানান, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো শতাধিক জেলে নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার। এ ছাড়াও বরিশাল অঞ্চলের ১১৪ জন জেলে ভারতে আটক রয়েছেন। খোঁজ মেলেনি ৩০টি ট্রলারের।

তিনি বলেন, ‘ইলিশ শিকারে ৬৫ দিনের অবরোধের পর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে ভাসতে ভারতে চলে যায়। ওই ট্রলারের ১২ জন জেলে ভারতের বারৈপুর জেলখানায় বন্দি আছে। এবার ঝড়ের কবলে পড়ে মোট ১১৪ জন জেলে ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকার তাকদীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে বাংলাদেশের ২১ জেলে চিকিৎসাধীন।

‘এ ছাড়া বুদ্ধপুর আশ্রয় কেন্দ্র ও হলদেবুনিয়া বন বিভাগে বাকি ৯৩ জন বাংলাদেশি জেলে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। তারা সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ৩২ জন জেলেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে পাথরঘাটার ৫ জন, মহিপুরের ১০ জন ও ১৭ জন পিরোজপুরের।’

মাসুম বলেন, 'আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে তাতে মোট ১০৪ জন জেলে নিখোঁজ। এদের অধিকাংশই ভোলার চরফ্যাশন ও পটুয়াখালীর মহিপুর ও পিরোজপুরের। এ ছাড়া বরগুনা জেলার ৩৪ জন জেলে ভারতে উদ্ধার হয়ে সে দেশের সরকারের আশ্রয়ে আছে।'

তিনি জানান, সবশেষ তথ্য মতে এখনো পর্যন্ত ৩০টি ট্রলারের কোনো খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজ ট্রলারের মধ্যে পাথরঘাটার ৯টি, তালতলীর ২টি, মহিপুরের ১১টি ও চরফ্যাশনের ৮টি। পাশাপাশি ডুবে যাওয়া ৩০টি ট্রলারের মধ্যে বরগুনা জেলায় ১০টি, ভোলার চরফ্যাশনের ৮টি, পটুয়াখালীর মহিপুরের ১টি, পিরোজপুরের ৪টি ও ভোলা সদরের ৭টি।

পটুয়াখালীর মহিপুর আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা বলেন, ‘আমাদের এখানে শুধু ১২ জেলেসহ মা-বাবার দোয়া নামের একটি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া ১৫টি ট্রলারের সব জেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু জেলে ভারতে উদ্ধার হয়েছে।’

আলীপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, সাগরের অস্বাভাবিক ঢেউ এবং ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ছয়টি ট্রলার ১০৮ জেলেসহ ডুবে যায়। এ সময় অন্য ট্রলারের মাধ্যমে ৯৫ জেলেকে উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন।

মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম বেপারী বলেন, ‘৬ আগস্ট থেকেই সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। তবে ১৯ আগস্ট সাগরের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। আমাদের ১৬টি ট্রলার পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিল। ১৯ আগস্টের আগে আমাদের কাছে তেমন মিসিং সংবাদ নেই।

‘হঠাৎ দুর্যোগ যেটা জেলেদের ভাষায় ‘দোমা’ বলা হয়। এবারের তুফান ভয়ানক ছিল। এবারের ১৬ ট্রলারডুবির ঘটনায় আমাদের ১৯ জন নিখোঁজ ছিল। আমরা ১০ জনকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি, এখন পর্যন্ত ৯ জন নিখোঁজ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যত্নের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। জেলেরা সেগুলো ব্যবহার করতে চায় না। যে কারণে নিখোঁজ বা মৃত্যু বেশি। মৃত্যু তো আমরা বলতে পারছি না, আমরা বলতে পারি নিখোঁজ।

‘আমাদের এখানে চার হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রতিটি ট্রলারে ২০ জন করে লোক থাকে। আমাদের জেলেরা আবহাওয়ার কোনো সংকেত পায় না। কুয়াকাটায় যে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয় সেটার আওতার বাইরে চলে গেলে আমাদের সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় জেলেদের। যে কারণে সাগরে থাকা জেলেরা কোনো খবর পায় না আবহাওয়ার। যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে ট্রলারডুবি বা জেলে নিখোঁজের সংখ্যা কমবে। তাছাড়া জেলেরা তেমন রেডিও ব্যবহার করে না।’

পিরোজপুর মৎস্য ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি কমল দাস জানান, শনিবার রাতে নিখোঁজ সাত ট্রলারের মধ্যে সন্ধান মেলে পাঁচ ট্রলারের। তার মধ্যে একটি ট্রলার সাগরে ডুবে গেলেও ওই ট্রলারের জেলেদের ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করেছেন।

পাথরঘাটার জেলে মাহিদুর রহমান ও জগলু মাঝি জানান, সরকার বা মালিক কারো পক্ষ থেকেই আমাদের জীবন রক্ষার সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয় না।

জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি বলেন, ‘আমরা ট্রলার মালিকদের প্রেসার করতে পারি না। তারা ব্যবসায় লসে আছে। সরকার যদি প্রতিটা ট্রলারে বয়াসহ নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করত, তবে জেলেদের অন্তত মৃত্যুর মতো ঝুঁকি থাকত না।’

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘৩২ জন জেলেকে ফেরত দিয়েছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। এর বাইরেও আমাদের ১১৪ জন জেলে এখনো ভারতে আছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে আমি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

‘এর আগে দিক হারিয়ে ভারতে প্রবেশের দায়ে আটক ১২ জন জেলের ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। আমাদের সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যদি সরকার সহযোগিতা না করে তবে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়লে জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘসূত্রতা ও ঝামেলায় পড়তে হবে।’

কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, ‘ভারতে উদ্ধার হওয়া জেলেদের উদ্ধারের খবর শুনে আমরা ভারতের কোস্ট গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা এখন পর্যন্ত ৩২ জেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বাকি জেলেদের ফিরিয়ে আনতে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে ১৯ আগস্ট খুলনাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় ওবায়দুল নামের একটি ট্রলার। সেই ট্রলারের ৯ জনকে ২৩ আগস্ট উদ্ধার করা গেলেও নিখোঁজ রয়েছে ৪ জন। ২০ আগস্ট দুটি পৃথক অভিযানে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ভেসে যাওয়া ৬৫ জেলেকে উদ্ধার করেছে সুন্দরবনের বন বিভাগের সদস্যরা। উদ্ধারকৃত জেলেদের মধ্যে বরগুনার পাঘরঘাটার ৩৮ জন, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও ভাঙ্গামারি ১২ জন, ভোলার আইচা এলাকার ১৫ জন রয়েছেন।

১৯ আগস্ট সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ৫টি ট্রলারে প্রায় ৯০ জন জেলে দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যায়। এ সময় তিনটি ট্রলারে থাকা ৬৫ জেলে কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়ে লোকালয়ে ওঠেন।

পরে বাকি দুটি ট্রলার সাগরের মধ্যে বড় বড় ঢেউ, প্রবল স্রোত ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে পড়ে ডুবে যায়। এ সময় দুটি ট্রলারে থাকা প্রায় ২৫ জন জেলে নিখোঁজ হয়।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ.কে.এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট পেট্রোল টিম-২ এর টিম লিডার স্বাদ আলী জামির নেতৃত্বে বনবিভাগের সদস্যরা মালঞ্চ নদী হয়ে মাহমুদা নদী যাওয়ার সময় তাদের দেখে দুটি ট্রলারে থাকা ৪১ জেলেকে পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে তাদের খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেন।

তিনি আরও জানান, বন বিভাগের হলদেবুনিয়া স্মার্ট প্যাট্রল টিমের সদস্যরা একই দিনে রায়মঙ্গল নদী থেকে ভাসমান দুটি ট্রলারে থাকা আরও ২৪ জেলেকে উদ্ধার করে তাদের কাছে নিয়ে যান। ২১ আগস্ট বিকেলে উদ্ধার করা জেলেদের তাদের স্বজনের হাতে তুলে দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর