বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গার্ডার দুর্ঘটনার দায় নেবে কে

  •    
  • ১৫ আগস্ট, ২০২২ ২১:৫২

পরিবহন সচিব আমানউল্লাহ নূরী বলেন, ‘‌‌‌দায় কি আমার? আমি কি মালিক? আমি কি বিআরটি প্রকল্প পরিচালক? আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’ 

উত্তরায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার ছিটকে পড়ে পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনার দায় কে নেবে?

সড়ক পরিবহন সচিব বলেছেন, এর দায় তিনি নেবেন না। তিনি এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিআরটির প্রকল্প পরিচালককে প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছেন। ওদিকে দুর্ঘটনার পর বারবার চেষ্টা করেও প্রকল্প পরিচালককে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তিনি দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, এই দুর্ঘটনায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও তদারকি প্রতিষ্ঠান- দায় আছে তিন পক্ষেরই। যে সাবধানতাগুলো মেনে কাজ করার কথা ছিল, সেগুলো না হওয়ার কারণেই এটি ঘটেছে। ফলে কারও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

দুর্ঘটনার পর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

সোমবার বিকেলে উত্তরায় চলন্ত প্রাইভেট কারে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাণহানির খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই জনক্ষোভ দেখা দেয়। এই ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। কিন্তু সতর্কতামূলক বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা অন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিকেল সোয়া ৪টায় দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি গেলেও তারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

বিআরটি প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে তার বক্তব্য জানতে পারেনি নিউজবাংলা। বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

পরিবহন সচিব আমানউল্লাহ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‌‘আমরা তদন্ত করছি। ওপর লেভেল থেকেই এটা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে আপনাদের জানাব। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ঘটনার দায় নেবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‌‌‌দায় কি আমার? আমি কি মালিক? আমি কি বিআরটি প্রকল্প পরিচালক? আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন।’

দায় সবার: বিশেষজ্ঞ

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান জানান, এমন নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে নির্মাণ এলাকা ঘিরে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হয়। যেন সাধারণ মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে না পারেন। এমনকি সে এলাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।

এই গবেষক বলেন, ‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে, আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’

‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্টে প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা তারা ফলো করছে না। …. অতীতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং নিহতের ঘটনাও আছে। ওইখান থেকেও আমাদের একটা শিক্ষা নেয়ার দরকার ছিল।’

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বিরল নয়। গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।

ঢাকার তেজগাঁও ও মালিবাগ মোড় এবং চট্টগ্রামেও প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়।

এমন প্রাণহানি ঘটে বলেই নির্মাণ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান নিরাপত্তা-বেষ্টনী ছাড়া আরও তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন এই নির্মাণকাজ নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘ক্রেন ঠিক আছে কি না। তার আগে দেখতে হবে ক্রেন যে অপারেট করছিল, তার লাইসেন্স আছে কি না। সে অভিজ্ঞ কি না, এটাও তদন্তের মাধ্যমে দেখতে হবে।

‘আমার গার্ডারের যে ওজন এবং ক্রেনের যে সক্ষমতা, সেটা ঠিক আছে কি না। এই জিনিসটাও গুরুত্বপূর্ণ।’

এখানে প্রশাসনিক অবহেলা আছে বলেও মনে করেন এই দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটা করছে, ভালো কথা। কিন্তু তারা ঠিকমতো প্র্যাকটিস করছে কি না, এটার নজরদারি বা তদারকির দায়িত্ব তো বাস্তবায়নকারী সংস্থার। এই ধরনের প্রকল্পের সুপারভিশনের দায়িত্ব আরেক সংস্থার থাকে।

‘তার মানে কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটার জন্য সুপারভিশন সংস্থা আছে, আমাদের বাস্তবায়নকারী সংস্থা আছে, এটার একটা সমন্বয় দরকার। আমি যেটা মনে করি, এই ধরনের কাজ একটা বড় কাজ।

‘পাশাপাশি এটা অনেক বিজি একটা করিডর। এই করিডরে কাজ করতে গেলে অবশ্যেই যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি এবং তদারকি করতে হবে। কোথাও যদি কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ব্যত্যয় হয়, তাকে কিন্তু জবাব দিতে হবে। এই জবাব দিতে হয় না বলেই আমরা দেখছি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবে হয় না। তাদের মধ্যে অবহেলার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। তাই দায়টা কিন্তু সবার ওপরেই বর্তায়।

এ বিভাগের আরো খবর