বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সামিয়াকে পদ ফিরিয়ে দিতে বলল হাইকোর্ট

  •    
  • ৪ আগস্ট, ২০২২ ১২:৩৮

সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার রায় দেয় উচ্চ আদালত।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাকে সব সুযোগ-সুবিধাসহ পদ ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।

সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। ওই রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার রায় দেয় উচ্চ আদালত।

আদালতে সামিয়া রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালত জারি করা রুল অ্যাবসুলেট করে আজকে রায় দিয়েছেন। রায়ে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দিতে বলেছেন আদালত।’

গত বছরের ৩১ আগস্ট পদাবনতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সামিয়া রহমান।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

এ ছাড়া পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির আরেক ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক করা হয়। তার ডিগ্রিও বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

দুটি ঘটনায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় শিক্ষকদের শাস্তি নির্ধারণে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সে সময় বলেছিলেন, ‘গঠিত দুটি ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।’

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অফ দ্য কালচারাল ইম্পেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোঁর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস।

শুধু ফুকোঁই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইম্পেরিয়ালিজম’ বইয়ের পাতার পর পাতা সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৯ অক্টোবর তাদের অ্যাকাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

রায়ের পর সামিয়া রহমানের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে একটি আদেশ দিয়েছিল। তিনি সেই আদশে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিলেন।

‘আজকে ওই রুলের শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। তার পদ ফিরিয়ে দেয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি, চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, সেই ট্রাইব্যুনাল কিন্তু তখন ফাইন্ডিংস দিয়েছিল যে, তার বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক না। এখানে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা যায় না। তারপরও ট্রাইব্যুনালের এই ফাইন্ডিংস উপেক্ষা করে ঢাবি সিন্ডিকেট একটা সিদ্ধান্ত দেয়।

‘তা ছাড়া এই ঘটনায় সামিয়া রহমানের কোনো স্বাক্ষর ছিল না। ওই আর্টিকেল প্রকাশে তার কোনো অনুমতিও নেয়া হয়নি। উনি যখন জানতে পারলেন যে তার নামে একটা আর্টিকেল প্রকাশ হয়েছে, তখন কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা উঠিয়ে নিতে একটা দরখাস্ত করেছিলেন। ঢাবি কর্তৃপক্ষ সেই দরখাস্তটি গ্রহণ করার পরও আর্টিকেল গ্রহণ না করে ৯ মাস পরে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

‘ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আমরা হাইকোর্টে আবেদন করি। আদালত এই গ্রাউন্ডেই আজকে রায় দিয়েছেন।’

এ রায়ের ফলে সত্যের বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী আজিম বলেন, ‘আমার ক্লায়েন্ট চৌর্যবৃত্তির মত এমন কোনো কাজই করেননি– এটা আজকে প্রমাণিত হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চৌর্যবৃত্তি রোধে কোনো রুল নাই। এটার কোনো সংজ্ঞাও নাই।

‘এখন সামিয়া রহমান মানহানির মামলা করবেন কিনা সেটা ওনার সিদ্ধান্ত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী ড. নাইম আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি ছিল উনি (সামিয়া রহমান) একটা আর্টিকেল নকল করে লিখেছেন। আদালত ওই প্রসঙ্গে কিছু বলে নাই। আদালত বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। এ কারণে আদালত ঢাবির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর ফলে তিনি স্বপদে বহাল হবেন।’

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রায়ের কপি পাওয়ার পর তা দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন, আপিল করবেন কিনা।’

এ বিভাগের আরো খবর