বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবাসী বাবা-ছেলের মৃত্যু এখনও রহস্য

  •    
  • ২৭ জুলাই, ২০২২ ২১:৪৬

এসপি বলেন, ‘আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কীভাবে এই ঘটনা ঘটল। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যারা অসুস্থ তাদের সঙ্গে আলাপ করলে হয়ত কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।’

সিলেটের ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশ।

ঘটনাটি মঙ্গলবার দুপুরের হলেও বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া স্বজনসহ ১২ জনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

পুলিশ বলছে, কারও সঙ্গে পরিবারটির কোনো বিরোধের তথ্য পাওয়া যায়নি। হেফাজতে নেয়া স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদেও সন্দেহ করার মতো কিছু মেলেনি।

কীভাবে এ ঘটনা ঘটল- এ প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে। পরিবারটির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদস্যদের সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ওসমানীনগরের তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডী সড়কের একটি বাসা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম, তার স্ত্রী হুছনারা বেগম এবং তিন ছেলে-মেয়ে মাইকুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম ও সামিরা ইসলামকে।

তাদের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রফিকুল ও বড় ছেলে মাইকুল মারা যান। আইসিইউতে ভর্তি করা হয় অন্য তিনজনকে।

যে বাসায় থেকে পরিবারটিকে উদ্ধার করা হয়, সেটির মালিক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলক। তিনি জানান, ১৮ জুন দেশে এসে প্রবাসী পরিবারটি এ বাসা ভাড়া নেয়। তাদের বাড়ি উপজেলার দয়ামীরে। তারা বাসায় ওঠার পরদিন গ্রাম থেকে রফিকুলের শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রী এসে সেখানে ওঠেন।

রফিকুলের শ্যালক সেবুল আহমদ নিউজবাংলাকে জানান, সোমবার রাতের খাবার শেষে রফিকুল তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং তার শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও মেয়ে পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে তারা ডাকাডাকি করার পরও রফিকুল বা তার স্ত্রী-সন্তানদের কেউ রুমের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশ ডাকা হয়।

দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ গিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙে ওই ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যালে পাঠায়।

মঙ্গলবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রফিকুলের পাশের কক্ষে থাকা শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগমসহ ১২ জনকে থানায় হেফাজতে নেয়া হয়।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বুধবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনও বুঝতে পারছি না কীভাবে এই ঘটনা ঘটল। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

‘যারা অসুস্থ তাদের সঙ্গে আলাপ করলে হয়ত কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু সুস্থ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। আজ হুছনারা বেগমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা সকালে তার সঙ্গে কথা বলতে হাসপাতালে গেছিলাম। কিন্তু তিনি এখনও কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে আসেননি। তাই তাদের সুস্থ হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছি আমরা।’

পরিবারটির পাশের কক্ষে থাকা স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদেরসহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তাদের কথাবার্তাতেও অসংলগ্ন কিছু পাওয়া যায়নি। আবার তারা এতটাই নিকটাত্মীয় যে তাদের সন্দেহও করা যাচ্ছে না।’

এখনও এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পারা বিব্রতকর জানিয়ে এসপি বলেন, ‘তাদের জমিজমা বা অন্য কিছু নিয়ে বিরোধের কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রবাসে থাকায় এলাকার লোকজনের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক নেই। ছেলেমেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার তথ্যও পাওয়া যায়নি। ফলে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা আমরাও বুঝতে পারছি না।’

বুধবার রফিকুলের শ্বশুর আনফর আলীর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।

তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে আমার মেয়ে জামাই বাজার থেকে বার্গারসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড কিনে আনেন। রাতে তারা পরিবারের সবাই ফাস্টফুড খেয়ে ১০টার দিকে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ডাকাডাকি করে না উঠায় পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় তাদের পায়। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

হুছনারার ভাই সেবুল জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুছনারা ও সাদিকুলের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন। তবে সামিরার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।

সেবুলের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা মঙ্গলবার চিকিৎসকের বরাতে জানান, খাবারে বিষক্রিয়া থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আলামত জব্দ করে এনেছি। বিশেষত ওই বাসার সব খাবার নিয়ে এসেছি। এগুলো রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে।’

মৃত বাবা-ছেলের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বুধবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। উপজেলার দয়ামীর ইউপির বড় ধিরারাই গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘পরিবারের কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করবে। তবে এই ঘটনার ক্লু উদঘাটন হলে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে পরবর্তীতে হত্যা মামলা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর