সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ হত্যার দুই দিন পর তার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনসেট ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক কামরুল ইসলামের টিলাগাঁওয়ের বাড়ি থেকে বুধবার সকালে মোবাইল এবং ওই ছুরিটি উদ্ধার করা হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন কামরুল। বলেছেন, তিনিসহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেন তিনজন। এরপরই তাকে নিয়ে অভিযানে যাওয়া হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, কামরুল ইসলামের পেশা রাজমিস্ত্রি বলে প্রচার আছে। তবে এর আড়ালে তিনি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
কামরুলসহ তিনজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ (বুধবার) আদালতে তোলা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
বুলবুলকে সোমবার সন্ধ্যায় যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, তখন সঙ্গে ছিলেন তার কথিত প্রেমিকা। হত্যার ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও পুলিশকে জানিয়েছেন, বুলবুল হত্যায় জড়িত তিন ব্যক্তি। ঘটনার সময় তাদের মুখে মাস্ক থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।
যে কারণে আলোচনায় বুলবুলের ‘প্রেমিকা’
বুলবুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেছেন তার সহপাঠীরা। তারা বলছেন, প্রেমের সম্পর্কের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খানও বলেন, মঙ্গলবার বুলবুলের কথিত প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি কিছু লুকাচ্ছেন। এরপর কাউকে কিছু না জানিয়ে তার হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়া সেই সন্দেহকে গাঢ় করে। পরে অবশ্য মেয়েটিকে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায়। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ভয়ে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন।
বাংলা বিভাগের এই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুলবুলের মৃত্যুর খবরে তিনি বারবার জ্ঞান হারাতে থাকেন। তখন তার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ফটক থেকে সোমবার বুলবুলকে হাসপাতালে নিয়ে যান সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল রোমান। তিনি বুলবুলের ঘনিষ্ঠ বড় ভাই হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সেই সুবাদে তার সঙ্গে ওই মেয়েটির কথাবার্তা হতো।
রোমান বলেন, ‘আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ছিলাম। বুলবুলকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এ সময় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে যেতে বললে সে রাজি হয়নি।
‘এ সময় আমি ওই মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করি। তখন তার কথা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ওই মেয়ে বলে- এক মিনিটে বুলবুলকে কয়েকজন খুন করে চলে গেছে। খুনিরা ছিতাইকারী।’
বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার মধ্যরাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে গাজীকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেন।
পরে গুরুতর অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। মঙ্গলবার রাতে নোয়াকান্দী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। স্বীমাকে হারানোর আট মাসের মাথায় ছোট ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম। হত্যায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন।