চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মেহেদী হাসান হৃদয় নামে ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রকে নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি জড়িত হিসেবে মেহেদীকে চিহ্নিত করলেও র্যাবের শনাক্ত করা ছয়জনের মধ্যে তার নাম পাওয়া যায়নি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে শুক্রবার ঘটনায় জড়িত দুজনকে চিহ্নিত করা গেছে বলে জানান। তাদের একজন ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান হৃদয় (বান্টি)।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের একজনের নাম মেহেদী হাসান হৃদয় ও আরেকজন আজিম হোসাইন।’
শনিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ছয়জনকে শনাক্ত ও চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। এই ছয়জনের মধ্যে মেহেদী হাসান হৃদয়ের নাম নেই। বাহিনীটির বর্ণনা অনুযায়ী তাদের শনাক্ত করা ছয়জনই ওই ছাত্রীকে নিপীড়িত করেছে। গ্রেপ্তার চারজনও মেহেদী হাসান হৃদয়ের সম্পৃক্ততা না থাকার কথা জানিয়েছে বলে জানায় র্যাব।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘একটু আগেও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের একটু কনফিউশন রয়েছে, আমরা এখনও তাকে (মেহেদী) পুরোপুরি সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখিনি। তবে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, সাইফুল ও মেহেদীর চেহারার মধ্যে একটি কনফিউশন রয়েছে। সাইফুলকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এটা নিশ্চিত হতে পারছি না আমরা।
‘এখানে আরেকটি তথ্য বলি, ভুক্তভোগী একটু আগে জানিয়েছে, সে হল থেকে প্রথম যে মোবাইলে কথা বলেছে, মোবাইলটি ছিল মেহেদীর। তার মোবাইল দিয়েই সে (ভুক্তভোগী) কথা বলেছে। তো এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত মেহেদীকে আমরা অভিযুক্ত করতে পারছি না। সেই সঙ্গে সাইফুলকে না ধরা পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না। গ্রেপ্তার বাকিদের তথ্য অনুযায়ীও মেহেদী তাদের সঙ্গে ছিল না।’
এই বিষয়ে প্রক্টর রবিউল হাসান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে মেহেদীর নাম এসেছিল। প্রকৃত অপরাধীদের সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করার পর তারা বলল যে, মেহেদী ছিল না।’
তাহলে এর আগে শনাক্ত হিসেবে মেহেদীর নাম কেন বলা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জন থেকে, বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে তার নাম এসেছ। সন্দেহভাজন হিসেবে অনেক নাম এসেছিল। আসল আসামিদের যখন মুখোমুখি করা হয়েছে, তারা তো র্যাবের কাছে স্বীকার করছে, আমরা এই কজন ছিলাম।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সত্য থেকে একচুলও নড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওনারা মূল আসামিদের ভুক্তভোগীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে তাদের চিহ্নিত করছে। মূল যে চিহ্নিত আজম, তার মাধ্যমে বাকিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের চিহ্নিত করেছে তারা নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করছে। আজমসহ সবাই বলছে মেহেদী ছিল না।’
সিসিটিভিতেও মেহেদী হাসানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
বহিষ্কার হচ্ছেন চবির ৩ ছাত্র
যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তিনজন স্থানীয় বহিরাগত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন, ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আজিম হোসাইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নুর হোসেন শাওন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার বাবু। বহিরাগতরা হলেন মো. সাইফুল, হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা ও মো. সাইফুল।
তাদের মধ্যে দুই সাইফুল ছাড়া বাকিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
র্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, ‘শুক্রবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং স্থানীয়। তার নেতৃত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর আমরা বাকিদের নাম পাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তিনজন শিক্ষার্থী এ ঘটনায় জড়িত তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম বার্ষিক সিনেট সভায় শনিবার বেলা ২টার দিকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে চারজনকে ধরা খুবই কষ্টকর। তাও সেটা হয়েছে। চারজনের মধ্যে তিনজন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।’