ঘোষণা দিয়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও কথা রাখতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এক ঘণ্টার স্থলে তিন ঘণ্টা এমনকি পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহককে।
খোদ রাজধানী ঢাকাতেই কোথাও কোথাও দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টায় তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দেশের অন্যত্র, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এ অবস্থায় তীব্র গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
জ্বালানি সংকট ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উল্লেখ করে সরকার বেশ ঘটা করেই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের আগাম বার্তা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় অর্ধযুগ পর পুনরায় লোডশেডিং শব্দের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ।
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় সোমবার। বলা হয়, দিনে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুতের লোডশেডিং হতে পারে। আর এখন থেকে সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকবে পেট্রল পাম্প৷
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওইদিন সকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সপ্তাহ না পেরোতেই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নতুন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া মন্দাভাব ঠেকাতে সরকারের সাশ্রয়ী নীতির অংশ হিসেবে সূচি করে লোডশেডিং দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। খরচ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। কিন্তু লোডশেডিংয়ের সূচি সঠিকভাবে সমন্বয় করতে না পারায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।
তবে বিদ্যুতের ব্যাপক মাত্রায় লোডশেডিংয়ের বিষয়টি মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, তারা এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি।
বিদ্যুৎ বিতরণে এমন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য ৭ থেকে ১০ দিন সময় চেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময়কালে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে লোডশেডিং কীভাবে আরও কমিয়ে সূচি মেনে চলা যায়, সে জন্য নতুন পরিকল্পনা নেয়া হবে।’
রাজধানীর গ্রাহকদের অভিযোগ, ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর এমনও দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে যেদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। অনেক এলাকার গ্রাহকরা বলছেন, দিনে দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার অনেকে বলছেন, সূচি মেনে এক ঘণ্টাই লোডশেডিং হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের এক ঘণ্টা সূচি ঠিক না থাকায় খানিকটা বিরক্ত পোস্তগোলার হাসনাবাদের গৃহিণী মোমেনা আক্তার মিতু। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল কারেন্ট গেছে তিনবার। রাতে কারেন্ট চলে গিয়ে দুই ঘণ্টা পর আসছে। প্রতিদিন তিন-চারবার যাচ্ছে। কখনও কখনও আবার অল্প সময় পরই চলে আসছে।’
একই অভিযোগ যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রীনা আহমেদের। তিনি বলেন, ‘কখনও কখনও দেড় ঘণ্টা পার হলেও বিদ্যুৎ আসে না।’
নাখালপাড়ার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, ‘গতকাল দুবার কারেন্ট গেছে। এক ঘণ্টা আবার কখনও আধা ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে আসে৷’
ধানমন্ডিতে সূচি মেনে এক ঘণ্টাই লোডশেডিং হচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রুবায়েত ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে হিসাব করে দেখেছি এক ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হয় না। একদম কাঁটায় কাঁটায় এক ঘণ্টা পরই আবার চলে আসে। কোনো গরমিল হচ্ছে না।’
বনানী ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে হাসানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিস আওয়ারেই তিন-চারবার লোডশেডিং হয়েছে। কখনও দেড় ঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা, আবার ২০ মিনিট পরও চলে আসছে।’
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘আজই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যে নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়েছে তা মানা হচ্ছে না। ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। সেদিন রাত ২টায় বিদ্যুৎ চলে যায়, ফিরে আসে ভোর ৬টায়।’
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। ফজরের আজানের সময় তা ফিরে আসে। এ ছাড়া দিনের বেলা একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে গিয়ে লম্বা সময় পর ফিরে আসে।’
অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ
রাজধানীবাসীর এসব অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ ডিপিডিসি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একেবারেই না। আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। আমরা রেগুলার মনিটর করছি।
‘তবে একটি এলাকায় ডিস্ট্রিবিউশনে সমস্যা হয়েছে। তা-ও ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর বিদ্যুৎ চলে আসে। এ ছাড়া ঘোষণার বেশি সময় ধরে লোডশেডিংয়ের কোনো তথ্য নেই।’