‘এমনিতেই কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নাই। পানি না থাকায় জমি তো ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। জমিতে আমনের চারা তৈরি করছি। বড় জমিতে পানির অভাবে হাল চাষ দিতে পারছি না। এতে আমার আমনের চারা নষ্ট হচ্ছে।
তারপরও বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিব। তাও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চারবার লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। এক পাম্পে গ্রামের ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক নির্ভরশীল। এভাবে লোডশেডিং হলে আমার সিরিয়াল কবে আসবে তা আমি নিজেও জানি না।’
এভাবেই নিউজবাংলাকে নিজের আক্ষেপের কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ২ নম্বর ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের তৈয়বপুর গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান।
লোডশেডিং নিয়ে শুধু কৃষক আতিকুর রহমানের আক্ষেপ রয়েছে তা নয়, এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পুরো দিনাজপুর। বিদ্যুৎ বিভাগের শিডিউল অনুযায়ী এলাকায় লোডশেডিং দেয়ার কথা এক ঘণ্টা। অথচ কিছু কিছু এলাকায় সারা দিনে তিন থেকে চারবার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় পাঁচবারও লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর শহরের রাজবাটী এলাকার বাসিন্দা সমাপ্তী অধিকারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকার শিডিউল অনুযায়ী দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা। তবে বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত, দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া হয়।
‘সকালে অল্প সময়ের জন্য দুইবার লোডশেডিং হয়েছিল। তবে বিকেলে লোডশেডিং হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এক ঘণ্টা ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে, দুপুর ১টার দিকে এক ঘণ্টা করে মোট তিনবার লোডশেডিং দেয়া হয়েছিল। আবার সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য লোডশেডিং হয়েছিল।’
দিনাজপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলী এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলা একবার এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সারা দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং দেয়া হয়। এতে করে দিনের বেলা মেশিনে কাজ ঠিকমতো করতে পারি না।’
একই এলাকার মোটরসাইকেল পার্টস ব্যবসায়ী সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘দিনাজপুর জেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অথচ আমরাই লোডশেডিংয়ের মধ্যে বসবাস করছি। দেশের অনেক জেলা রয়েছে, যেখানে কোনো লোডশেডিং দেয়া হয় না। তাই আগে দিনাজপুর জেলায় উৎপাদন হওয়া বিদ্যুৎ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে সরবরাহের দাবি জানাচ্ছি।’
দিনাজপুর নেসকো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই ইউনিটের অধীনে চাহিদা রয়েছে ১৭ দশমিক ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৩ মেগাওয়াট।’
দিনাজপুর নেসকো-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, ‘এই ইউনিটের অধীনে চাহিদা রয়েছে ২২ থেকে ২৪ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের নেসকোর দুইটি ইউনিটে ৩৩/১১ কেভির আওতায় দিনাজপুর-১ (ফকিরপাড়া), দিনাজপুর-২ (বালুবাড়ী) ও দিনাজপুর-৩ (উপশহর)। ফকির পাড়া সাবস্টেশনের অধীনে থাকা কলেজ এলাকায় লোডশেডিং হবে বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
একইভাবে এই স্টেশনের আওতাধীন মালদহপট্টি বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত, রাজবাটী বিকেল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা, রামনগর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা, চেহেলগাজী দুপুর ১টা থেকে ২টা, পিটিআই রাত ৮টা থেকে ৯টা, কাঞ্চন থেকে বেলা ৩টা থেকে ৪টা, মাজার রাত ৯টা থেকে ১০টা এবং কাটাপাড়া এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকবে।
এদিকে বালুবাড়ী সাবস্টেশনের আওতাধীন বালুবাড়ী এলাকায় লোডশেডিং থাকবে বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। একইভাবে এই স্টেশনের আওতায় বালুডাঙা বেলা ২টা থেকে ৩টা, ঈদগা রাত ৯টা থেকে ১০টা, এক নম্বর নিউটাউন বেলা ৩টা থেকে ৪টা এবং চক্ষু হাসপাতাল এলাকায় লোডশেডিং থাকবে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত।
উপশহর সাবস্টেশনের আওতাধীন পুলহাট এলাকায় লোডশেডিং থাকবে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। একইভাবে এই স্টেশনের আওতায় মাঝিপাড়ায় রাত ৭টা থেকে ৮টা, কসবায় দুপুর ১২টা থেকে ১টা এবং উপশহর এলাকায় লোডশেডিং থাকবে দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত।