বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভূমিহীন-গৃহহীন নেই ৫২ উপজেলায়: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২১ জুলাই, ২০২২ ১৩:৪৫

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরও আনন্দিত, আমাদের উদ্যোগের ফলে একটা প্রাথমিক সফলতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সেটা হলো পঞ্চগড় এবং মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ সারা দেশের ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হলো।’

দেশের ৫২টি উপজেলায় কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাঁচ জেলায় বৃহস্পতিবার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর এবং জমি হস্তান্তর করে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

রাষ্ট্রীয় বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সব জেলার সঙ্গে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। দল-মত, পক্ষ-বিপক্ষের সব মানুষের জন্য নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে চাই। হয়তো এ জন্যই বারবার মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি; মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও ঘাবড়ে না গিয়ে সংগ্রাম চালিয়েছি।’

দেশের সব নাগরিকের দায়িত্ব সরকারপ্রধানের জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মতভিন্নতা থাকলেও সবাই মানুষ। আমি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমারই। দল-মত-নির্বিশেষে যে-ই গৃহহীন থাকবে, আমরা তাদের ঘর করে দেব। ঘর করে তাদের ঠিকানা দেব, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব।

‘দল-মত হয়তো ভিন্নতা থাকতে পারে। তাতে কিছু আসে-যায় না। দেশটা তো আমাদের। আর আমি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমারই।’

তিনি বলেন, ‘মতভিন্নতা থাকতে পারে, পথভিন্নতা থাকতে পারে, আদর্শভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু তারপরও মানুষ মানুষই। কাজেই মানুষকে আমি মানুষ হিসেবে দেখি। প্রত্যেকটা মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা। এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই।’

বিগত সরকার ভূমিহীনদের খবর রাখেনি অভিযোগ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘১৯৯১ সালে দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক মানুষ মারা যায়; প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অনেক মানুষ ভূমি ও গৃহহীন হয়ে পড়ে, কিন্তু তৎকালীন সরকারের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তারা এর খবরই রাখেনি।

‘সংসদে ঘূর্ণিঝড় ও মানুষের দুর্দশা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, যত মানুষ মারা যাওয়ার কথা ছিল, তত মানুষ মারা যায়নি। তখন আমি তার কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম, কত মানুষ মারা গেলে তত মানুষ হবে।’

তৎকালীন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিতে গেলে সেখানে বাধা দেয়া হয়। ছাত্রদলের কর্মীরা গাড়ি যেতে বাধা দিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘গাড়ি রেখে হেঁটেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে দুর্যোগকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর ১৯৯৭ সালে ওই এলাকায় ভূমি ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগের প্রভাবে তখন স্পেন সফর বাতিল করে দুর্যোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করি। মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করি। বঙ্গবন্ধুর নির্মিত সাইক্লোন শেল্টারে মানুষদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’

সে সময় কক্সবাজার এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনে প্রথম মানুষের ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আমরা সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নিই।

‘এভাবে মানুষের পুনর্বাসনের জন্য কাজ শুরু করি, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ২০০১ সালের পর বিএনপি সরকারে এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকারে ফিরে সেগুলো আবার শুরু করি।’

সেই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর দেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি জানান, গৃহহীনদের জন্য জমি কেনার লক্ষ্যে পাঁচ কোটি টাকার একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে অনেকেই এই ফান্ডে অনুদান দেন। সে ফান্ড থেকেই অনেকের নামে জমি কিনে বাড়ি করে দেয়া হয়, যাতে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন না থাকে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করাই আমার লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষকে যেন সুন্দর জীবন দিতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।’

প্রতিটি মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের বাংলাদেশে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসন হবে। প্রত্যেকটা মানুষ তার ঠিকানা পাবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি।’

কেউ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকলে তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারি কর্মকর্তাসহ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা দেখেন আপনাদের এলাকায় কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন আছে কি না। অন্যান্য দলেরও যারা, কারও কাছে যদি খবর থাকে, অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন।’

দুটি জেলার সব উপজেলাসহ সারা দেশের ৫২টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা আরও আনন্দিত, আমাদের উদ্যোগের ফলে একটি প্রাথমিক সফলতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। সেটা হলো পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ সারা দেশের ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হলো।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করি, প্রতিটি জেলা-উপজেলাকেই ভূমিহীন এবং গৃহহীন মুক্ত করতে পারব। প্রতিটি মানুষের একটি ঘর থাকবে, তাদের একটি স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, তাদের একটি সুন্দর বাসস্থান থাকবে; তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে।’

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনকবলিত ভূমি-গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় কয়েক লাখ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া ভাসমান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীও রয়েছে।

১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৭০টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থার মাধ্যমে ৭ লাখ ১২ হাজার ২৬৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

পরিবারপ্রতি ৫ জন হিসাবে এতে সুফলভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৫ জন।

ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলা থেকে সুফলভোগী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর