বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মণ্ডপে কোরআন: মামলাতেই ‘গণ্ডগোল’, অভিযোগপত্র নেই ৯ মাসে   

  •    
  • ১৮ জুলাই, ২০২২ ১৭:২০

কুমিল্লার মণ্ডপে গত বছর কোরআন রাখা এবং শহরজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২টি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে মাত্র দুটির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ইকবালেরটিসহ বাকি ১০টি মামলা রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের দুর্গাপূজা মণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ উদ্ধারের পর গত বছর ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মুখোমুখি হয় দেশ। অনুসন্ধানে পরে বেরিয়ে আসে ইকবাল হোসেন নামে এক যুবক গভীর রাতে কোরআন শরিফটি ওই মণ্ডপে রাখেন।

ঘটনার কয়েক দিন পর ইকবালকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

মণ্ডপের বাইরে পূজার থিম হিসেবে রাখা হনুমানের মূর্তির ওপর পবিত্র কোরআন শরিফ রাখায় সরাসরি জড়িত ইকবাল হোসেন এখন কারাগারে। তবে কোরআন রাখার ঘটনায় করা মামলায় আদালতে ৯ মাসেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ।

এ মামলায় ইকবাল ছাড়া অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। মামলাটির ধারা নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।

দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে গত বছরের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।

মণ্ডপের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মণ্ডপে কোরআন রাখা এবং কুমিল্লা শহরজুড়ে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২টি মামলা করে পুলিশ। এর মধ্যে মাত্র দুটির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ইকবালেরটিসহ বাকি ১০টি মামলা রয়েছে তদন্ত পর্যায়ে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

মণ্ডপে ইকবালের কোরআন রাখার মামলাটির তদন্ত করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হাকিম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ১৪ অক্টোবর মামলাটি সিআইডিতে আসে। এরপর শুরু হয় তদন্ত। এ মামলার প্রধান আসামি কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার ইকবাল হোসেন ।

‘এ ছাড়া সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আছেন মণ্ডপে কোরআন দেখে ৯৯৯ খবর দেয়া নগরীর মৌলভীপাড়ার ইকরাম হোসেন ওরফে রেজাউল হক, দারোগাবাড়ীর মাজারের সহকারী খাদেম নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান ফয়সাল, তার সঙ্গী মো. হুমায়ূন কবির ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন আহমেদ বাবু।’

এ মামলায় ইকবাল হোসেন ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে আছেন বলে জানান আবদুল হাকিম।

এত দিনেও অভিযোগপত্র না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। তবে যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে তা ছিল পেনাল কোডের ২৯৫ ধারায়। এই ধারাটি জামিনযোগ্য। এ জন্য আমরা বিজ্ঞ আদালত ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা ২-এর কাছে মামলার ধারা পরিবর্তনের আবেদন করেছি।’

দণ্ডবিধির ২৯৫ ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্মের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতিসাধন বা অপবিত্র করা’র মতো অপরাধের ব্যাখ্যা ও শাস্তির প্রসঙ্গ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ এ ধরনের অপরাধ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল হাকিম জানান, তারা মামলার ধারা পরিবর্তন করে ২৯৫ (ক) করার আবেদন করেছেন। এই ধারার মামলা ‘জামিন অযোগ্য’ বলেও জানান তিনি।

দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় ‘কোনো শ্রেণিবিশেষের ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে ওই শ্রেণির ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্বেষাত্মক কর্মকাণ্ড’-এর ব্যাখ্যা ও শাস্তির কথা রয়েছে। তবে ২৯৫ এর মতো এই ধারাতেও অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

ইকবালসহ এ মামলার পাঁচ আসামির সবার বিরুদ্ধেই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। এখন শুধু মামলার ধারা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। সেটার অনুমতি পেলেই আমরা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়ে দেব।’

ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত শেষ করতে দেরি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আবদুল হাকিম জানান, সিআইডির তদন্ত করা মোট ছয়টি মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ওই মামলায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে পিবিআই-এর তদন্ত করা চারটি মামলার মধ্যে একটিতে একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি মামলা এখনও তদন্তাধীন। বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান।

এ ছাড়া দুটি মামলার তদন্ত করছে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, তাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

কুমিল্লার আদালত পরিদর্শক মো. মুজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিনের ঘটনায় মোট ১২টি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় মোট ৯৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। যাদের মধ্যে ইকবালসহ ৫৩ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৫০ জনকে।’

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে কতজন এখন কারাগারে বা জামিনে আছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি আদালত পরিদর্শক মুজিবুর রহমান। তবে ইকবাল ছাড়া কেবল একজন এখন কারাগারে আছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে একটি সূত্র। কারাগারে থাকা ওই ব্যক্তি হলেন ফয়েজ আহমেদ

পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ১৩ অক্টোবর সকালে ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ। পরে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জড়িতদের দীর্ঘদিনেও বিচারের মুখোমুখি করতে না পারার ঘটনায় হতাশ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি চন্দন রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণেই প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনায় দায়ীদের বিচার হলে দেশের অন্যত্র এখন একই ধরনের কাজ করার সাহস কেউ করত না। যতদিন এসব ঘটনার বিচার না হবে ততদিন এমন ঘটনা আরও ঘটবে।’

চন্দন রায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা বাঙালি হিসেবে একত্রিত হয়েছিলাম বলেই জয়ী হতে পেরেছি। স্বাধীনতা পেয়েছি। অথচ আজ স্বাধীন দেশেই আমরা হিন্দুরা বারবার হামলার শিকার হচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর