ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক দিন। এ সময় মার্কেটে ক্রেতার চাপ বাড়ার প্রত্যাশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। অথচ সেভাবে জমে ওঠেনি নওগাঁয় ঈদের কেনাকাটা।
সরেজমিন শহরের কাপড়পট্টি, গীতাঞ্জলি শপিং প্লাজা, জহির প্লাজা, শুভ প্লাজা, ইসলাম মার্কেট, দেওয়ান বাজার, কুমারখালী বস্ত্রালয়, ইসলাম মার্কেট, জলিল গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশি-বিদেশি জমকালো পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা।
তবে কেনাকাটায় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের আগমন খুব একটা নেই বললেই চলে। কিছু ক্রেতা পাওয়া গেলেও বিত্তবান পরিবার ছাড়া সাধারণ মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনেকাংশেই কম।
বিক্রেতেরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহায় এমনিতেই বেচাকেনা কম হয়। সবাই কোরবানির পশু কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তবে অন্যান্য কোরবানির ঈদের তুলনায় এবারের বিক্রি অনেক কম।
শিলামনি গার্মেন্টস মালিক নেপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘কোরবানি ঈদে খুব একটা বেচাকেনা হয় না। তাই বেশির ভাগই ঝোঁক কোরবানির পশুর দিকে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা কম মানুষই করেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে যে আত্মীয়স্বজন আসছেন, তাদের উপহার হিসেবে কিছু কেনাকাটা করছেন। তবে যেটুকু বেচাকেনা হচ্ছে, তা সুতি পোশাক। তবে ঈদুল ফিতরের চেয়ে কম দামেই পোশাক বিক্রি করছি।’
লক্ষ্মী বস্ত্রালয়ের শিবেন শর্মা বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো না। সবকিছুর দাম বেশি। কোরবানি ঈদে কাপড় একটু কমই বিক্রি হয়। আমরা প্রতিদিন যে টার্গেট নিই তা পূরণ হবে না। ব্যবসা টিকে রাখতেই চুপচাপ বসে থাকা। আবার অনেক ক্রেতা দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। হয়তো তাদের সাধ্যে মিলছে না।’
আরেক বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, ‘বেচাকেনা খুব খারাপ। বেশি বিক্রি হচ্ছে গাউন বা টপস। এখনও এক দিন বাকি আছে, আশা করি এই দুই দিনের বেচাকেনা ভালো হবে। যে লাভ না করলেই নয়, সেই লাভেই বিক্রি করার চেষ্টা করছি পোশাকগুলো। তবুও অনেক ক্রেতা পোশাক দেখেন, দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন।’
কাপড় ব্যবসায়ী রায়হান হোসেন বলেন, ‘কোরবানি ঈদে সে রকম ব্যবসা হয় না। সবাই কোরবানির পশু কেনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। ঢাকা থেকে যা নিয়ে এসছি, তার কিছুই বিক্রি হচ্ছে না।’
জেলার রানীনগর থেকে এসেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সন্তানদের জন্য পোশাক কেনার জন্যই মূলত এসেছি। ছোট বাচ্চাদের পোশাক প্রচুর দাম। কষ্ট হলেও বাড়ির শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কিনলাম।’
নিলুফার জাহান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আমার দুই মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। অনেক দোকান ঘুরছি, এখনও কিনতে পারিনি। অনেক দাম মেয়েদের পোশাকের। যদি দাম কিছুটা কম পাই, তবে কিনব।’
আকরাম হোসাইন বলেন, ‘এই ঈদ হচ্ছে পশু কেনার ঈদ, জামাকাপড় কেনার নয়। এই ঈদে পোশাক কেনা লোকের সংখ্যা খুবই কম। আমিও কিনতাম না, শুধু আমার বাচ্চা মেয়েটা আবদার করেছে ঈদে নতুন জামা লাগবে। তাই কিনে দিচ্ছি।’
নওগাঁ জেলা গার্মেন্টস খুচরা বিক্রেতা মালিক সমিতি সভাপতি নাসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যে জিনিস ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়ে এসেছেন, তাই বিক্রি করতে পারছেন না। আর মাত্র এক দিন বাকি আছে। এখন যারা কেনাকাটা করছেন, শিশুদের জন্য কেনাকাটা করছেন। বেচাকেনা খুব খারাপ। ব্যবসায়ীরা চিন্তায় পড়েছেন। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীনে পড়বেন।’
এক সপ্তাহ থেকেই ঢিলেঢালা গেলেও শেষ সময়ে ক্রেতাদের সমাগম হবে- এমন প্রত্যাশা করছেন বিক্রেতারা।