জাতীয় পার্টির (জেপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার ৩ নম্বর বালিপাড়া ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক মো. ইকবাল সেপাই। হতদরিদ্র নন। কিন্তু পেয়েছেন ভূমিহীনদের জন্য তৈরি করা সরকারের উপহারের ঘর।
সেই ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি এবং টেলিভিশন দেখতে তারবিহীন স্যাটেলাইট সংযোগ ডিটিএইচ বসিয়ে নিজেই আর্থিক সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন।
সমালোচনার মুখে তিনি বলছেন, ঘর পাওয়ার আগে তিনি গরিব ছিলেন। এখন ভাগ্য ফিরেছে। তার সন্তান গরম সহ্য করতে পারে না বলে এসি লাগিয়েছেন। এ নিয়ে সমালোচনাইবা কেন, সেটি তিনি বুঝতেই পারছেন না।
স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা যাচাই-বাছাই করেই জনাব সেপাইকে ঘর দিয়েছেন। তিনি যদি প্রকৃত গৃহহীন না হন, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনা আরও বড় হয়েছে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অসচ্ছল ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আধাপাকা গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ঘর পেয়ে লাখ লাখ মানুষ চোখের জল ফেলেছে।
তবে বেশ কিছু এলাকায় ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে শুরু থেকেই। প্রকৃত অসচ্ছলদের বাদ দিয়ে বিত্তশালীদের হাতে দলিল তুলে দেয়ার ঘটনায় একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে নিউজবাংলায়।
ইকবাল সেপাই ড্রেজিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাসে আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। চলাফেরা করেন প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের পালসার মোটরসাইকেলে। চলনবলনই বলে দেয়, তিনি দরিদ্র মানুষ নন।
জনাব সেপাই বুঝতে পারছেন না, তিনি দোষ কী করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ একটি ঘর আমি পেয়েছি। এটি বুঝে পাওয়ার পর আমি আমার মতো সাজিয়ে নিয়েছি।’
ছাত্রসমাজের বালিপাড়া ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক মো. ইকবাল সেপাই
আপনার মতো একজন মানুষের কি এই ঘর নেয়ার কথা ছিল?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আগে আরও গরিব ছিলাম। মানুষ আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হয়। আমিও হয়েছি।
‘আমি ও আমার বাচ্চা গরম সহ্য করতে পারি না। বাচ্চাটি কান্নাকাটি করে। তাই কিস্তিতে একটি এসি কিনে ঘরে লাগিয়েছি। এতে দোষের কী হলো?’
ইন্দুরকানী উপজেলায় মোট ঘর নির্মাণ হচ্ছে ৫৪৪টি। কিছু ঘরের কাজ এখনও চলছে। বাকিগুলো বিতরণ হয়ে গেছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, এই এলাকায় জাতীয় পার্টির (জেপি) সুপারিশে বেশ কিছু ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই জেপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়।
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, ‘গৃহহীনদের তালিকায় উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল সেপাই নামে এক যুবক একটি ঘর পেয়েছেন। তাকে অনেক যাচাই-বাচাই করেই ঘরটি দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল এসির বিষয়টি জানতে পেরেছি। তিনি নিজ উদ্যোগে ঘরে এসি লাগিয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। উনি ভূমিহীন-গৃহহীন না হলে ব্যবস্থা নেব।’
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দরিদ্র ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে সরকারি খরচে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কোনো সচ্ছল ব্যক্তির এসব ঘর পাওয়ার কথা নয়। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’