সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ১ লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
বন্যা পরিস্থিতি ও উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট জেলার ৬০ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। এদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধারকাজ করছে।
‘সবশেষ খবর অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর ৩২, নৌবাহিনীর ১২ এবং ফায়ার সার্ভিসের ৪টি বোট কাজ করছে দুই জায়গায়। এরই মধ্যে তারা ১ লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৭৫ হাজার আর সিলেটে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। নিখোঁজের কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। গতকালের (শনিবার) পর থেকে কোনো ক্যাজুয়ালটিও হয়নি।’
বন্যায় এখন পর্যন্তু দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দুজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সে স্রোতে ভেসে গেছে। আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন।
বন্যাদুর্গতদের অবস্থা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ে আছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে, কিন্তু সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত আছে। একই সঙ্গে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।’
সিলেট ও সুনামগঞ্জে সোমবারের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আমরা যে বার্তা পেয়েছি, সেখানে বলা হয়েছে, সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকবে। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিন দিন কমবে।
‘এ সময় উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল বা ভাটির দিকে অবনতি হবে। আরও নতুন করে যে জেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেগুলো হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এখন ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা রয়েছে। এটা বাড়ছে।
‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কমবে, কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বন্যা বাড়বে। কারণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বেসিনে যেসব জেলা আছে, সেগুলো বন্যা কবলিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত আমরা একেকটি জেলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আজ আরও ৫০ লাখ করে দিয়েছি। মোট এক কোটি ৩০ করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
‘যে জেলাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে, সেগুলোতে আমরা ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল আর ৪ হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।
‘যে সংখ্যায় বন্যা কবলিত হয়েছে, এখানে আরও ত্রাণ দরকার, কিন্তু আমরা যেটা দিচ্ছি, বিতরণ করে পারছে না। এ কারণে সাপ্লাইয়ের একটি কন্টিনিউয়াস চেইন মেইনটেইন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিআর চাল আছে, শুকনা খাবারও আছে। যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে আমরা দেব।’
বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যার একটি আভাস কিন্তু দেয়া হয়েছিল। আবহাওয়া আধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আগেই বলেছিল, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে, কিন্তু এত বৃষ্টি হবে, এটা পূর্বাভাস দেয়া হয়নি। ১৫ থেকে ১৭ তিন দিনে ২৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
‘এত বৃষ্টি পৃথিবীর কোথাও হয়েছে, এমন রেকর্ড নেই। এ কারণে এত উচ্চতায় পানি এসেছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল না বলে আমরা বলব না যে, অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু ঝুঁকি কমাতে উদ্ধারের জন্য কাজ করতে পেরেছি।’