বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বপ্নের সেতুমুখী বাসে ৩০০ কোটির বিনিয়োগ

  •    
  • ১০ জুন, ২০২২ ১৪:০২

শরীয়তপুরের ডিসি পারভেজ হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপি বাড়বে দুই শতাংশের ওপরে। এর প্রভাব এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। পরিবহন খাতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা; আরও করবেন।’

শরীয়তপুর থেকে ১৮ বছর আগে বাসে করে ফেরি চেপে ঢাকায় আসতেন মানুষ। পরে নানা কারণে রাজধানীর সঙ্গে নৌযান হয়ে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর পর থেকে সড়ক ও নৌপথে ভেঙে ভেঙে ঢাকা আসতে হয় ওই অঞ্চলের মানুষকে। এতে জেলার পরিবহন খাত দুর্বল হয়ে যায়।

পদ্মা সেতু হওয়ায় শরীয়তপুরের ভগ্ন পরিবহন খাত মেলছে ডানা। পদ্মা সেতুর এক প্রান্তের জেলা থেকে রাজধানীতে সড়কপথে সরাসরি চলবে বাস। এ জন্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে জেলার চারটি কোম্পানির প্রায় ২০০ এসি, নন-এসি বাস প্রস্তুতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকেই ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালুর খবরে শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরাসরি বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন এই রুটে ব্যবসার জন্য নতুন বাস প্রস্তুত করছে তারা।

শরীয়তপুরের বাসস্ট্যান্ড ও কোটাপাড়া এলাকার ওয়ার্কশপগুলোতে তৈরি হচ্ছে বাসের নতুন বডি। একই প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক ব্যবসায়ী সাভারের ওয়ার্কশপে বাস তৈরির কাজ করছেন।

ভলভো, আইচার, টাটা, হুন্দাইসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আনা নতুন চেসিসে বসিয়ে দেয়া হবে তৈরি বডিগুলো। এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়ে গেছে বেশ কিছু বাস। সেগুলোতে চলছে পেইন্টিং ও ফিনিশিংয়ের কাজ।

ওয়ার্কশপ পল্লিতে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের কাজের টুংটাং শব্দে মুখরিত আশপাশ। স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ্রমিকরা।

কেউ ওয়েল্ডিং করছেন, কেউ আবার গ্র্যান্ডিং মেশিনে লোহার শিট কাটছেন। এভাবে নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানকার শ্রমিকরা।

যশোর থেকে এসে শরীয়তপুরের কোটাপাড়া ওয়ার্কশপে দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে বাস তৈরির কাজ করছেন মো. সোহাগ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাজের চাপ অনেক বেশি থাকায় বাইরের জেলা থেকে আমাদের চুক্তি ভিত্তিতে নিয়ে আসা হয়েছে।

‘বর্তমানে ওয়ার্কশপটিতে ১০টি বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। আরও ২০টি তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সময় পর্যন্ত কিছু বাস প্রস্তুত হলেও সবগুলো বাস কোরবানির ঈদের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে।’

বাসের বডি তৈরির কাজে ব্যস্ত সাইফুল আলম বলেন, ‘এখন বাসের বডিতে বিভিন্ন উপকরণ বসানোর কাজ চলছে। ফ্যানের খাচা তৈরি, বক্সের পাল্লার ফ্ল্যাটবার, হেড লাইটের ফ্রেমসহ বিভিন্ন কাজ করছি আমরা।

‘বডি তৈরি শেষে এগুলো ইঞ্জিন চেসিসের ওপর বসিয়ে দেয়া হবে। এরপর ফিনিশিং কাজ করলেই প্রস্তুত হয়ে যাবে বাসগুলো।’

পরিবহন ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামে নতুন কোম্পানি খুলেছে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য কোম্পানিটি ৪০টি নতুন বাস প্রস্তুত করছে।

এ ছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহনও ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি কোম্পানিই চাহিদা অনুযায়ী নতুন বাস প্রস্তুত করছে। এর মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের শতাধিক বাস ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল শুরু করেছে।

পরিবহন ব্যবসায়ীরা আরও জানান, নতুন এই রুটে চলাচলের জন্য কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে তিন শতাধিক বাস প্রস্তুত করছে। এর মধ্যে প্রতিটি নন-এসি বাস তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। আর এসি বাসে খরচ ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত।

তারা আরও জানান, পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচলের জন্য নতুন করে পরিবহন খাতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাসগুলো শরীয়তপুর জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জে চলাচল করবে।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক আব্দুল খালেক পালোয়ান বলেন, ‘১০ বছর ধরে লোকসান গুনেও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। এখন নতুন করে বাস তৈরিতে আবার ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি।

‘পদ্মা সেতু যেদিন খুলে দেয়া হবে, সেদিন থেকেই আমরা বাসে করে যাত্রী নিয়ে ঢাকা যেতে চাই।’

শরীয়তপুর পরিবহনের পরিচালক আরশাদুজ্জামান এরশাদ বলেন, ‘রাজধানীর সঙ্গে আমাদের কোম্পানির এসি, নন-এসি বাস চলাচল করবে। এরই মধ্যে ৩০টি গাড়ি প্রস্তুত রয়েছে। আরও ৩০টি তৈরির কাজ চলছে।’

জেলা শহরের সুপারশপ ব্যবসায়ী মো. লিটন বলেন, ‘ব্যবসার কাজে সপ্তাহে একাধিকবার ঢাকা যেতে হয়। পদ্মা পাড়ি দিতে সময় ও অর্থের অপচয়সহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

‘বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় পদ্মা। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব ভোগান্তির অবসান হবে। মাত্র দেড় ঘণ্টায় আমরা ঢাকায় যেতে পারব।’

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার জানান, ২০০৪ সালে ফেরিস্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে সরাসরি ঢাকা-শরীয়তপুর বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবার দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে ৬০টি বাস প্রস্তুতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবে স্থানীয় ও ঢাকার বেশ কিছু কোম্পানিও এ রুটে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পারভেজ হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপি বাড়বে দুই শতাংশের ওপরে। এর প্রভাব এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

‘পরিবহন খাতে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আরও বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ হচ্ছে। নতুন করে বিনিয়োগ করা উদ্যোক্তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (মূল সেতু) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার।

সব মিলিয়ে সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। সেতুর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এ সেতু।

এ বিভাগের আরো খবর