গ্রাহকসেবা দিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের যে পরিমাণ তরঙ্গ নেয়ার কথা, তার এক-তৃতীয়াংশও তারা নেয় না বলে কলড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দেয় বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সরকারের চাপে গত মার্চে কোম্পানিগুলো তরঙ্গ বাড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করা হলে সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন মন্ত্রী। সংসদ সদস্য আবু হোসেনের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কলড্রপ ও নেটওয়ার্কের সমস্যা একটি বড় সংকট। এমন কেউ নেই যিনি কলড্রপের শিকার হননি। অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোনের গ্রাহক আট কোটির বেশি, রবির গ্রাহক পাঁচ কোটির বেশি। গ্রাহক অনুযায়ী অপারেটরগুলোর যে পরিমাণ তরঙ্গ নেয়া দরকার তারা তার তিন ভাগের এক ভাগও নেয়নি।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তরঙ্গ নিতে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারের চাপে এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো তরঙ্গ সম্পূর্ণ সম্প্রসারণ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, জরিমানা করার সুযোগ আছে।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য নূর উদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণফোনের মার্কেট শেয়ার বেশি থাকায় সব অপারেটরকে একই কলরেট নির্ধারণ করা হলে গ্রামীণফোনের সেবার প্রতি গ্রাহক আকর্ষণ বেড়ে যাবে। ফলে তার মার্কেট শেয়ার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ অবস্থায় ছোট অপারেটরদের মার্কেটের অবস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।’
জনসংখ্যার চেয়ে সিম বিক্রি বেশি
দেশে জনসংখ্যা যত, তার চেয়ে বেশি মোবাইল সিম বিক্রি হয়েছে বলেও আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবুর প্রশ্নের জবাবে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, ২০২২ সালে এসে দেশে মোবাইল গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৩৪ লাখে। এর মধ্যে থ্রিজি গ্রাহক ৩ কোটি ১৯ লাখ এবং ফোরজি ৭ কোটি ৫৪ লাখ।
২০২১ সালের ২৮ জুন পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ এক হাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন ১.৩ শতাংশ। এই হিসাবে জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটির কিছু বেশি।
মন্ত্রী জানান, ২০১২ সালে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ২ কোটি ৮৯ লাখ, এখন তা বেড়ে ১২ কোটি ৪২ লাখ হয়েছে। ২০১২ সালে দেশে টেলিডেনসিটি ছিল ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ, এখন টেলিডেনসিটি ১০৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ওই সময় ইন্টারনেট ডেনসিটি ছিল ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ; এখন বেড়ে ৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ হয়েছে।
সরকারের পাওনা ১৩ হাজার কোটি
দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছে সরকারের ১৩ হাজার ৬৮ কোটি টাকা পাওনা বলে জানান মন্ত্রী।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আরও জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের কাছেও সরকারের পাওনা রয়েছে।
এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাওনা নিয়ে সরকারের সঙ্গে মামলা চলছে। সেগুলো হলো- গ্রামীণফোন, রবি ও সিটিসেল।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, পাওনার মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের কাছে ১ হাজার ৬৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, রবি আজিয়াটার কাছে ৭২৯ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা, বন্ধ হয়ে যাওয়া সিটিসেলের কাছে ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণফোনের অডিট আপত্তির টাকার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করেছে দুই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৫ টাকা।
‘রবি আজিয়াটার কাছে সরকারের পাওনা ছিল ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৬ টাকা। এর মধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
‘টেলিটকের কাছে পাওনা ১ হাজার ৬৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে থ্রিজি স্পেকটার্ম ফি বাবদ ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ইক্যুইটিতে কনভার্সনের রূপান্তরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’