রাজধানীর জুরাইনে এক নারী মোটরসাইকেল আরোহীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ট্রাফিক বক্সে হামলা ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মারধর করেছে উত্তেজিত জনতা। এতে তিন পুলিশ আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জুরাইন ট্রাফিক বক্সে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন, মোটরসাইকেল চালকের আসনে থাকা রনি, তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান ও তার ভাই ইয়াসিন আরাফাত।
সরকারি কাজে বাধা, পুলিশ সদস্যদের অ্যাসল্ট এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় মামলা করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি উল্টোপথে যাচ্ছিল, কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গাড়িটি আটকিয়ে কাগজ দেখতে চাইলে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এতে সেখানকার পথচারী ও স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে। তারা ট্রাফিক বক্সে ভাঙচুর চালায়।’
আহত তিন পুলিশ হলেন সার্জেন্ট আলী হাসান, ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম, শ্যামপুর থানার উপপরিদর্শক উৎপল দত্ত।
আটক রনি ও তার স্ত্রী শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং রনি বার্তা বিচিত্রার সম্পাদক বলে পুলিশের কাছে পরিচয় দিয়েছেন। পরে আহত রনিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, মোটরসাইকেল চালকের পেছনে থাকা স্ত্রীকে পুলিশ লাঞ্ছিত করেছে। এর প্রতিবাদে উপস্থিত পথচারী ও আশপাশের বাসিন্দারা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়।
তবে পুলিশ বলছে, সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য ওই নারীকে লাঞ্ছিত করেছে এমন কোনো তথ্য প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। পাবলিক সিমপ্যাথি নেয়ার জন্য ওই নারী মিথ্যে অভিযোগ করেছেন।
ডিএমপির ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ওই নারীকে লাঞ্ছিতের কোনো প্রমাণ পাইনি। আমাদের দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টের কাছে বডি অর্ন ক্যামেরা ছিল। এতে পুরো বিষয়টি ধারণ করা আছে। এর ফুটেজ ও কথা শুনে লাঞ্ছিত করার কোনো তথ্য পাইনি। তবে পুলিশ সার্জেন্টের ক্যামেরা কাভারেজের বাইরে গিয়ে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন কেন? এ নিয়ে চিৎকার, চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে হামলা করে। ট্রাফিক বক্সে হামলা চালায়।’
বডি অর্ন ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজের বর্ণনা দিতে গিয়ে উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘একজন ভদ্রলোক মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন, পেছনে বসা ছিলেন তার স্ত্রী। মোটরসাইকেলটি উল্টোপথে যাচ্ছিল, যে কারণে সার্জেন্ট গাড়ি দাঁড় করান এবং কাগজপত্র দেখতে চান। তখন তিনি কাগজপত্র বের করেন নাই, উল্টো সার্জেন্টের কাছে কাগজপত্র দেখতে চান। আপনি কে, আপনার পরিচয় কী, কাগজ দেন।
‘তখন সার্জেন্টকে বলতে শোনা যায়, আমি কে আমার পোশাকই তো বলে দেয় আমার পরিচয়, আমি তো ইউনিফর্মে আছি। তখন মোটরসাইকেল চালকের আসনে থাকা ভদ্রলোক হুট করে বলে ফেলেন প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাস্তানি করেন, কিছু বলি না, আজ দেখে নেব। এই সময় ওই ভদ্রলোকের পেছনে থাকা মহিলা ক্যামেরার বাইরে গিয়ে বলতে শোনা যায়, এই আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন কেন? গায়ে হাত দিল কখন, কারণ ভদ্রলোক মোটরসাইকেলে বসা ছিলেন এবং সার্জেন্ট খানিকটা দূরে থেকে কথা বলছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ওই নারী চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন, এতে পাবলিক সিমপ্যাথি জাগে, ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ, দূরে থাকা মানুষজন তো আর পুরো ঘটনা শোনেননি, তারা শুধু গায়ে হাত দিলেন কেন চিৎকারটুকু শুনেছেন। ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রীসহ উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। ট্রাফিক বক্স ভাঙচুর করে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘শ্যামপুর পুলিশবক্সে হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্য উৎপল দত্ত অপু এসে জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।’
হামলার ঘটনায় আটক রনিকেও ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
রনি বলেন, ‘স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে কদমতলী মুরাদপুর বাসা থেকে জজকোর্টে যাওয়ার পথে বিক্রমপুর প্লাজার বিপরীত দয়াগঞ্জ রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ হাত নাড়া দিলে আমি দাঁড়াই। পুলিশকে বললাম, আমার স্ত্রীর কোর্ট আছে, আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। পুলিশ কোনো কর্ণপাত করেনি।
‘পরে এক কথা, দু’কথায় আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও হাতাহাতি হয়। তখন ওই পুলিশ আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিকে অস্বীখার করলে তারা কয়েকজন মিলে আমাদের মারধর করে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেখানে আমিসহ ৬ জনকে আটক করে পুলিশ।’