আদালতে বাবার বিরুদ্ধে মায়ের করা যৌতুক মামলার সাক্ষ্য দেয়ায় ছেলেকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই মা।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত ২০ বছরের শাকিব মুন্সি আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ইছাপাশা গ্রামের ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে একই এলাকার সাবিনা ইয়াসমিনের ২৭ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য সাবিনার ওপর শারীরিক নির্যাতন করে আসছেন তার শাশুড়ি ও স্বামী।
নির্যাতন মেনে নিয়েই সংসার করে আসছিলেন সাবিনা। ওবায়দুর ও সাবিনা দম্পতি তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। সবার বড় মেয়ে মুরশিদার বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর ছেলে ওহিদুজ্জামান নাঈম মুন্সি ঢাকায় চাকরি করেন, আরিফ মুন্সি পড়ালেখা শেষ করে বাড়িতে থাকেন, অপর ছেলে শাকিব মুন্সি গোপালগঞ্জ সরকারি পলিটেকনিক কলেজে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ২য় বর্ষে পড়ালেখা করছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘২৭ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি আমাকে নির্যাতন করতো। বিয়ের কিছুদিন পর শাশুড়ির পাশাপাশি স্বামীও আমাকে নির্যাতন শুরু করে। এরই মাঝে আমার কোলজুড়ে সন্তান আসে। ওদের কথা চিন্তা করেই সব নির্যাতন সহ্য করে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই আমাকে মারপিট করতো আমার স্বামী। তিন বছর আগে আমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সে। সুস্থ হতে প্রায় ৬ মাস লেগে যায়। এরপর থেকেই একই বাড়িতে থাকলেও আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আলাদা ঘরে বসবাস করি। আলাদা থাকা অবস্থায় দেড় বছর আগে আবারও আমাকে মারপিট করে।
‘এরপর আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুকের দুইটি মামলা করি। মামলার পর থেকেই আরও বেপরোয়া হয়ে যায় আমার স্বামী। তার সঙ্গে যোগ দেয় আমার দেবর সিরাজুল ইসলাম। দুইজন মিলে আমাকে ও আমার সন্তানদের একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছে।’
সাবিনা ইয়াসমিনের বড় ছেলে ওহিদুজ্জামান নাঈম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে মায়ের করা মামলার স্বাক্ষী ছিল আমার ছোট ভাই শাকিব। গত ১৯ মে আদালতে বাবার বিপক্ষে স্বাক্ষী দেয় সে। স্বাক্ষী দেয়ার পর থেকেই আমার বাবা ও চাচা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার রাত ৯টার দিকে আমার ছোট ভাই শাকিব বাড়ির পাশে নতুন বাজারে মশার কয়েল কিনতে যায়। পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবা ও চাচার ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা ছোট ভাই শাকিবের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়।
তিনি জানান, হামলায় শাকিব বেহুশ হয়ে পড়ে। সে মারা গেছে মনে করে তাকে সড়কের ওপর ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে স্থানীয়রা শাকিবকে উদ্ধার করে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। হামলার সময় আবির ও অন্তর নামে দুইজনকে চিনতে পারে শাকিব। অন্যদের অন্ধকারে চিনতে পারেনি। এ ঘটনায় তাদের মা বাদী হয়ে বাবা, চাচাসহ ৫ জনের নামে থানায় মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কল কেটে দিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন। পরে তার মোবাইল আর খোলা পাওয়া যায়নি।
সাবিনা ইয়াসমিনের দেবর সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বা আমাদের লোকজন শাকিবের ওপর হামলা চালায় নি। তাকে তার মামা ও মামাতো ভাই মারপিট করেছে। উল্টো আমাদের হয়রানি করতে থানায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে।’
আলফাডাঙ্গা থানার ওসি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের তদন্ত পূর্বক ঘটনায় আমরা সত্যতা পেয়েছি। এ বিষয়ে মামলা করা হবে। মামলার বিষয়ে কয়জন আসামি হবে এর বিস্তারিত মামলাটি রুজু করার পর জানা যাবে। তবে আসামি ধরতে পুলিশ কাজ করছে।’