বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্ণাকে ঘিরে বাঁচার স্বপ্ন দাদা-দাদির

  •    
  • ২৪ মে, ২০২২ ১৪:২৯

অর্ণার দাদা অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘একসময়ে আমাদের পরিবারে অনেক অভাব ছিল। এসএসসি পরীক্ষার ফি জমা না দিতে পেরে ছেলে অভিজিত লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরে সে সংসারের হাল ধরে। ছেলের অনেক শখ ছিল তাদের মেয়ে অর্ণাকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে। এখন অর্ণাকে নিয়ে আমরা আছি। সে কিছু বুঝছে না, কাঁদছেও না। অর্ণাকে নিয়ে ছেলে যে স্বপ্ন দেখত, আমি যতদিন বেঁচে থাকি ছেলের স্বপ্ন পূরণ করব, অনেক লেখাপড়া শেখাব।’

মায়াভরা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে চার বছর বয়সী অর্ণা বিশ্বাস। সে জানে না তার মা-বাবা আর নেই। কেউ জিজ্ঞেস করলে কখনও সে উত্তর দিচ্ছে তার মা-বাবা হাসপাতালে, আবার কখনও উত্তর দিচ্ছে না।

খুলনার ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে নিজ ঘরে গত বুধবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একসঙ্গে মারা যান অর্ণার বাবা অভিজিত বিশ্বাস ও মা কেয়া বিশ্বাস। ওই সময় আহত হয় অর্ণাও।

সম্প্রতি অর্ণাদের বাড়িতে যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন অর্ণার দাদা অসীম বিশ্বাস ও দাদি সুন্দরী বিশ্বাস।

সেই উঠানে খেলা করছে অর্ণা। তার ডান হাত ও ডান পায়ে রয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ক্ষত। ব্যথায় হাত নাড়াতে না পারলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে অর্ণা।

ঘটনার দিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে অর্ণার দাদি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে ছেলে ও বউমা একসঙ্গে ধান মাড়াই করছিল। পরে গোসল করে এসে ভাত খেয়ে ছেলে, বউমা ও অর্ণা একত্রে ঘরে যায়। আমি ও আমার স্বামী তখন বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই করছিলাম।

‘হঠাৎ বউমা আমাকে ডেকে একটা চিৎকার দেয়। পরে আর কোনো শব্দ করেনি। আমি ও আমার স্বামী তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি ছেলে ঘরের বারান্দায় মাথা গুটিয়ে বসে টিনের বেড়া ধরে কাঁপছে। বউমা তার পাশে শুয়ে একইভাবে কাঁপছে। অর্ণা পড়ে আছে তার মায়ের কোলে।’

তিনি জানান, সন্তান ও বউমার এমন পরিস্থিতি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। আগে অর্ণাকে টেনে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে পরে ছেলে ও বউমাকে ছাড়াতে গেলে বিদ্যুতের শক খেয়ে বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি।

পরে প্রতিবেশীরা এসে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। ছেলে ও তার বউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

অর্ণার দাদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে ছেলে ও বউমার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শ্মশানঘাটে নিয়ে তাদের সৎকার করা হয়।’

‘বাবা হয়ে সন্তানের চিতায় আগুন দেয়া যে কত কষ্টের, তা যে বাবা দিয়েছে শুধু সেই জানে। আমার সেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ছেলে আমাদের কত আশা দেখাত। এর আগেই আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল। তার মৃত্যুতে আমিও যেন মারা গেলাম।’

তিনি জানান, অভিজিত তার একমাত্র ছেলে। তার দুই মেয়ে আছে, তারা বিবাহিত।

তিনি বলেন, ‘একসময়ে আমাদের পরিবারে অনেক অভাব ছিল। এসএসসি পরীক্ষার ফি জমা না দিতে পেরে ছেলে অভিজিত লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরে সে সংসারের হাল ধরে। ছেলের অনেক শখ ছিল তাদের মেয়ে অর্ণাকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে।

‘এখন অর্ণাকে নিয়ে আমরা আছি। সে কিছু বুঝছে না, কাঁদছেও না। অর্ণাকে নিয়ে ছেলে যে স্বপ্ন দেখত, আমি যতদিন বেঁচে থাকি ছেলের স্বপ্ন পূরণ করব, অনেক লেখাপড়া শেখাব।’

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, ‘আমি অর্ণার কাছে গিয়েছিলাম। তার দাদা-দাদির সঙ্গেও দেখা করেছি। তখন ওই পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।’

যেভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন অর্ণার বাবা-মা

অর্ণার বাবা-মা টিনের ঘরে থাকতেন। ঘরের ভেতর মাঝামাঝি এক স্থানে একটি বিদ্যুতের সার্কিট র‍য়েছে। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে বিদ্যুতের তার।

মৃত অভিজিতের ভগ্নিপতি দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরের মাঝামাঝি যে সার্কিটটি আছে, সেখানে মেইন সুইচ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। সেই সার্কিটটি ভালো করে ফিটিং ছিল না।’

‘ওই সার্কিট থেকে একটি তার বের হয়ে টিনের বেড়ার সঙ্গে বিদুৎসংযোগ লেগে যায়। এতে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। ’

তিনি বলেন, ‘দুপুরে খাবার খেয়ে অর্ণার বাবা-মা ঘরের ভেতরে খাটে ছিল। ওই খাটের পাশেও টিনের বেড়া আছে। সেই বেড়া থেকে তারা প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে সেখান থেকে ছিটকে বারান্দায় পড়ার পর আবারও টিনের বেড়ায় হাত লাগায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তারা।’

এ বিভাগের আরো খবর