পাঁচ দিন আগেও সিলেটের বিভিন্ন সড়কে হাঁটুর ওপর পানি ছিল। নৌকাও চলতে দেখা গেছে শহরের মধ্য দিয়ে। তবে এখন পানি সরে সড়ক ফিরে পেয়েছে আগের পরিচিত রূপ।
সিলেট উপশহরের প্রধান সড়কে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সড়ক পানিশূন্য। এই আবাসিক এলাকার অন্য সড়কেও পানি নেই। শুধু কয়েকটি নিচু এলাকায় এখনও পানি জমে আছে।
তালতলা এলাকার বাসাবাড়ি থেকেও পানি নেমে গেছে। অথচ কয়েক দিন আগে তালতলার অনেক এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানি ছিল।
গত ১১ মে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। নগর তলিয়ে যেতে শুরু করে ১৬ মে থেকে। ৮ দিন পর নগর থেকে নামল পানি।
১৩ দিন পর সিলেটে সুরমা নদীর পানিও বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে।
কুশিয়ারা নদীর পানি সব পয়েন্টেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এলাকা থেকে পানি কমলেও এখনও দুর্ভোগে আছে নগরবাসী। পানি নেমে যাওয়ায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে পচা দুর্গন্ধ। অনেকেরই বাড়ি ও দোকানের বিভিন্ন মালামাল ও আসবাবে পচন ধরেছে। নষ্টও হয়ে গেছে অনেক সামগ্রী।
কয়েক দিন পানিবন্দি থাকার পর নগরবাসী এখন ব্যস্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে।
তালতলা এলাকার রজত কান্তি গুপ্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাত দিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। এখন পানি নামলেও ঘরে ড্রেনের ময়লার স্তূপ জমে আছে। দুর্গন্ধে থাকা দায়। পুরো এলাকায়ই দুর্গন্ধ। মশার উৎপাতও বেড়েছে।’
ঘাসিটুলা এলাকার বিমল রায় জানান, তারা এখন ব্লিচিং পাউডার দিয়ে নিজেদের বাসাবাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাব ধোয়া-মোছার কাজও চলছে। তবু দুর্গন্ধ কমছে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। এখন দু-একটি এলাকা বাদে সব জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মীরা দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ এবং ময়লার দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, নিজেদের বাড়িঘর নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করতে পারে।
নগরের পানি কমলেও গ্রামাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। জেলার ১২টি উপজেলায় এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছে কয়েক লাখ মানুষ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, ‘সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই পুরো জেলার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’