ভূমিহীন ও দরিদ্র পরিবারের জন্য বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর রংপুর জেলা পরিষদের এক কর্মচারী পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একই সঙ্গে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘরটির আয়তন বাড়িয়ে এর নকশায়ও পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘরের পেছনে ভেঙে আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করে তাতে সংযুক্তকরণের কাজ চলছে বলেও জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা পরিষদের আওতাধীন পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের ডাকবাংলোর নিরাপত্তারক্ষী রমজান আলী ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে তার দাবি, ঘরটি তার স্ত্রী রনজিনার নামে বরাদ্দ পেয়েছেন।
রংপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, রমজান আলী পায়রাবন্দ ডাকবাংলোতে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে (মাস্টার রোল) চাকরি করছেন।
ডাকবাংলোর সরকারি কোয়ার্টারে একটি বাসা (টিনশেড) তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। পরিবার নিয়ে তিনি সেখানেই থাকেন। বেতন পান ১২ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত কারও জমির পরিমাণ দশ শতকের নিচে হলে আমরা তাকে ভূমিহীন বলি। রমজান আলী সচ্ছল হয়ে থাকলে তিনি তথ্য গোপন করেছেন। এটি অন্যায়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের পাশে খোর্দ্দ মুরাদপুর মূল রাস্তার উত্তর পাশেই রমজান আলীর আশ্রয়ণের ঘর। এর পাশেই আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। আশ্রয়ণের ঘরের কয়েকটি পিলার ও পেছনের কিছু অংশ ভেঙে নতুন ভবনের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া আশ্রয়ণের ঘরটির ওপরে ৪৬ মিলি রঙিন টিন দেয়ার কথা থাকলেও এ ঘরের কিছু কিছু অংশে দেয়া হয়েছে সাধারণ টিন।
আবার আশ্রয়ণের অন্য ঘরগুলোর আয়তন ৪০০ বর্গফুট হলেও রমজান আলীর ঘরটির আয়তন বাড়িয়েছেন।
নতুন ভবনের কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটির কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত ভবনে ছাদ ঢালাই দেয়ার কথা আছে। এখন পর্যন্ত মোটামুটি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
ঘরের ওপরে কোথাও কোথাও সাধারণ টিন ব্যবহার করে নকশায় আনা হয়েছে পরিবর্তন। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রমজান আলীর যে জমি আছে তার বর্তমান দাম ১৫ লাখ টাকার বেশি হবে। পায়রাবন্দের আশপাশে এমন জমি পাওয়া দুষ্কর। পায়রাবন্দ বাজারেও সুরুজ সু-স্টোর নামে তার দুটি জুতার দোকান আছে।’
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রমজান আলীর দুই বিঘার মতো চাষাবাদের জমি আছে। নীলফামারীর ডিমলায় তার পৈতৃক পাকা বাড়ি ও কয়েক একর জমি আছে। তিনি কীভাবে ভূমিহীনদের জন্য দেয়া বরাদ্দের ঘর পান।’
এ বিষয়ে কথা হয় রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘরের লাগোয়া আমার পাঁচ শতক জমি আছে। স্ত্রীর নামে রয়েছে চার শতক। ছেলেরা কিনেছে পাঁচ শতক। মোট ১৪ শতক জমির ওপর আমরা বাড়ি নির্মাণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি জেলা পরিষদের সদস্যদের মাধ্যমে আবেদন করেছি। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। জুতার দোকান আমার ছেলের। যে জমিটুকু আমি কিনেছি তা বহু কষ্টে।’
নিয়মিত বেতন ও কোয়ার্টারে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ছেলেদের পরামর্শে ঘরটি বড় করেছি যাতে ভবিষতে স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থাকতে পারি।’
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (সাবেক) আব্দুল করিম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিলে। আবেদনের ভিত্তিতে তারা ঘরগুলো বরাদ্দ দেন। এগুলো ভূমিহীনদের দেয়ার কথা। তবে সরকারি চাকরি করার পরও রমজান আলী কীভাবে আশ্রয়ণের ঘর পেলেন তা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই বিষয়টি জেনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’