ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) মোমতাসিরুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার বিকেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান।
লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলেজে প্রবেশ করে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইনকে তুই শিবির করিস বলে কানে-মুখে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে তিনি শিক্ষকদের কমনরুমে গিয়ে নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক সুব্রত, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিদ মণ্ডল, খাতা চুরি মামলার আসামি রকিবুল ইসলাম মিল্টন, কর্মচারী তাপস ও সবুজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোশাররফকেও লাঞ্ছিত করেন। তারা কলেজের কিছু নথি হাতিয়ে নিয়ে মোশাররফকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এ সময় কলেজের কর্মচারী তাপস ও সবুজ তাকে টানাহেঁচড়া করেন।
অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘কলেজ থেকে সরকারি খাতা চুরির বিষয় নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে মামলা করা হয় আদালতে। মামলাটি বর্তমান সিআইডি তদন্ত করছে। মামলার সাক্ষী গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন।
‘এ কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ আসামিরা। তারাও ওই কলেজে চাকরি করেন। বহিরাগতদের ডেকে খাতা চুরি মামলার আসামি রকিবুল ইসলাম মিল্টনসহ অন্যরা তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।’অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘কলেজের কাজে সহকারী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। নন-এমপিও ৬১ নম্বর সিরিয়ালের জুনিয়র প্রভাষক সব্রত কুমার নন্দী ও খাতা চুরির মামলার আসামি সাবেক উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে বহিরাগত, কলেজের স্টাফ সবুজ ও পিয়ন তাপসের সহায়তায় ত্রাস সৃষ্টিসহ মোশাররফ হোসেনকে লাঞ্ছিত করে।’
অভিযোগকারী শিক্ষক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার এসে শিক্ষক রুমের সবাইকে বের করে দেন। এরপর আমাকে শিবির করিস বলে থাপ্পড় মারেন। গ্রুপিং করিস কেন বলেই পরপর পাঁচ-ছয়টি থাপ্পড় মারেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমপি মারধর করেন।’
তিনি জানান, এমপি মারধরের আগে কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতি তুই শিবির করিস বলে চড়-থাপ্পড় মারে। এতে তিনি কানে গুরুতর আঘাত পান।
এখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানান।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একটি ফাইল হাতিয়ে নিতে সুব্রত ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল আটকে রেখে অপমান-অপদস্ত, এমনকি মারধর করতে উদ্যত হন। এ ধরনের একটি সরকারি ডকুমেন্ট নিতে হলে কালীগঞ্জ ইউএনওর সম্মতি ছাড়া দিতে পারব না বলে তাদের সাফ জানিয়ে দিই।’
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আটক অবস্থা থেকে তারা ছেড়ে দেন বলে জানান মোশাররফ।
এ ব্যাপারে জানতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, কলেজের বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
অধ্যক্ষ তাকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় অধ্যক্ষের অভিযোগ বিষয়ে এসপি মোমতাসিরুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।