মূল অপরাধ যেহেতু বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, সেহেতু ভারতে বিচারের আগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে ঢাকা ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার ফরেন এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনের প্যারালাল সেশন-১ এ যোগদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুল হক।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে একটি গণমুখী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
‘জনগণের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করোনা মহামারির সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আইন ও বিচার বিভাগ ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করে। এই পদক্ষেপ করোনাকালে জরুরি সমস্যা মোকাবেলা এবং কারাগারে বন্দিদের বাড়তি চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নের যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে একটি সমন্বিত কর্মপদ্ধতি নিয়েছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর ম্যাপিং, আর্থিক কৌশল, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, ডেটা গ্যাপ বিশ্লেষণ, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, এপিএ-তে এসডিজি অর্ন্তভুক্তিসহ অনেক কাজ সম্পন্ন করেছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার একটি জনকেন্দ্রিক আধুনিক গণতন্ত্র গ্রহণ করেছে। ফলে দেশে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালীসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। আর এসব উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।’
সম্মেলনে বক্তব্য শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন। তবে মানি লন্ডারিং আইন যেহেতু বিশ্বের সব জায়গায় কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, তাই টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে তাকে ফিরিয়ে আনা। এবং যে মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে, তখন থেকে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পিকে হালদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে সেই অভিযোগের বিচার করে তার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আরাফাত রহমান কোকোর সময় যে ব্যাপারটা ছিল, তখন আমরা যাদের সঙ্গে কোলাবরেট করেছিলাম তাদের জন্য টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
‘এখন পি কে হালদারের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনাটা আরও সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ সারাবিশ্বে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর আইন করা হয়েছে। তা আমাদের দেশেও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিলে অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
‘আমি এ ব্যাপারে অ্যাডভান্স কিছু বলতে চাই না। নিশ্চয়ই আমরা তাদের সঙ্গে আলাপে বসব। আমাদের এখানে যেহেতু মূল অপরাধটা করা হয়েছে, আমরা তাকে আগে চাইবো সেটাই স্বাভাবিক।’
এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার প্যারালাল সেশন-১ এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবগণ তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়/বিভাগের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
এই সেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোসাররফ হোসেন ভূঁইয়া। আলোচক ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।