সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সুরমার পানি উপচে সোমবার সকাল থেকে সিলেট নগরেও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। দুপুর পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেটে বৃষ্টি কমলেও ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।পানি বাড়ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জেও।
সিলেটের তিন নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সুরমার পানি ঢুকে সকালে নগরের উপশহর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায়ও পানি ঢুকে পড়ে।
নগরের কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী নিলাঞ্জন দাশ টুকু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে এসে দেখি দোকানের সামনে পানি এসে গেছে। দুপুর গড়ানোর আগেই দোকানের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। এখন পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এত দ্রুত পানি বাড়তে আমি আগে কখনও দেখিনি।’
নগরের সোবহানিঘাট এলাকার বাসিন্দা দেবজ্যোতি দাস বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। আমাদের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।’
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমবার সকালে ‘ইউএনও গোয়ানঘাট’ ফেসবুক পেজ থেকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করে লেখেন- ‘প্রিয় গোয়াইনঘাটবাসী, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে বৃষ্টি বাড়বে। সকলকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ করা হলো।‘ইতোমধ্যে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে, এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। ত্রাণের সাথে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে, পানি পানে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।‘এ সময়ে বজ্রপাত, পানির স্রোতে নৌকাডুবি, বাঁধভাঙা, গাছ উপড়ে যাওয়া, সাপেকাটাসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনাদের সাথে সাথে নিম্নোক্ত নাম্বারে জানানোর অনুরোধ করা হলো-০১৭৩০৩৩১০৩৬, ইউএনও, গোয়াইনঘাট০১৩২০১১৭৯৬৯, অফিসার ইনচার্জ, গোয়াইনঘাট থানা০১৭৪৭০৯৭৬৫০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, গোয়াইনঘাট০১৭৩০৩২৪৭৫৫, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোয়াইনঘাট এবং সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’
পাউবো জানায়, সোমবার সকাল ৯টার দিকে সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার চেয়ে পানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার।
সুরমার পানি গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট পয়েন্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার। সোমবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে সোমবার সকালে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টেও বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ পয়েন্টে পানির সীমা ছিল ৬ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার; সোমবার সকাল ৯টায় পানির সীমা হয় ৬ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার। পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। এখানে সোমবার সকাল ৬টায় পানির সীমা ছিল ৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার; সকাল ৯টায় পানির সীমা দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার।
গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানি গতকালের চেয়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, সিলেটে কাল থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। তবে উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, এ কারণে ঢল নামছে। ফলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির দিকে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় সহায়তা পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পাঠানো হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’