নেত্রকোণার বারহাট্টায় ভুল চিকিৎসাতেই প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি। হাতুড়ে চিকিৎসকের অপচিকিৎসাকে ওই দুই মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
শনিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পল্লি চিকিৎসক নামে খ্যাত আবুল কাশেমের চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল। আসলে তিনি এসব চিকিৎসা করার অধিকার রাখেন না। না বুঝে তিনি প্রসূতির শরীরে উচ্চমাত্রার ইনজেকশন পুশ করেন। পরে প্রসূতির ব্যথা বাড়লে তিনি প্রসবের রাস্তা কেটে দেন। এ অবস্থায় প্রসূতি মৃত ছেলেসন্তান প্রসব করেন। আর আবুল কাশেম সুতা দিয়ে প্রসব রাস্তার কাটা স্থানটি সেলাই করে দেন। এতে প্রসবের মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় ওই প্রসূতির এবং ১ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান।’
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রসূতিকে যে স্যালাইন ও ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, ‘সরেজমিন তদন্ত, প্রসূতির পরিবারের বক্তব্য, অভিযুক্ত পল্লি চিকিৎসকের বক্তব্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান যে কথিত চিকিৎসকের অজ্ঞতা এবং প্রসূতির স্বামী ও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণেই প্রসূতি শরীফা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন জানান, আবুল কাশেম ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পশুপাখির চিকিৎসা করতেন। ২০১০ সালের পর থেকে তিনি মানুষেরও চিকিৎসা শুরু করেন। তবে তিনি পল্লি চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনো বৈধ সনদ দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া প্রসূতির রক্তের গ্রুপ তার জানা ছিল না।
মোহাম্মদ শিহাব বলেন, ‘ওই প্রসূতি গর্ভাবস্থায় তিনবার এমবিবিএস চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে তার সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ ছিল চলতি মে মাসের ২৭ তারিখ।’
প্রসূতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মে দুপুরে বারহাট্টার চন্দ্রপুর গ্রামে হাতুড়ে চিকিৎসক আবুল কাশেমের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি শরীফা আক্তার ও তার নবজাতকের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শরীফা আক্তার সিংধা ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের হাইছ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি এবার বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছিলেন। গত বছর সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার নামাগাঁও গ্রামে মহসিন মিয়ার সঙ্গে শরীফার বিয়ে হয়।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আবুল কাশেম একই উপজেলার জীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা।
শরীফা ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ওইদিন রাতেই আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফার স্বামী। পরে পুলিশ অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। আর ঘটনার দুদিন পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
৮ মে দুপুরে আদালতের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা চৌধুরীর উপস্থিতিতে কবর থেকে প্রসূতি ও নবজাতকের মরদেহ তুলে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়।
৯ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটি।