শতাধিক ‘ধর্ম ব্যবসায়ীর’ তালিকা দিয়ে তাদের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’।
তবে ওই তালিকায় থাকা কয়েকজন বলছেন, এ ধরনের তদন্তে তাদের আপত্তি নেই। এ ধরনের তালিকাকে ‘আলেম সমাজকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা’ হিসেবেও দাবি করছেন তারা।
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে বুধবার শতাধিক ইসলামি বক্তার বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের’ দুর্নীতির তদন্তের আহ্বান জানায় ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন।’
গণকমিশনের তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে ১১৬ জনের নাম রয়েছে। শ্বেতপত্র ও তালিকাটি একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও দেয়া হয়েছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’।
শ্বেতপত্র ও সন্দেহভাজন শতাধিক ব্যক্তির তালিকা হস্তান্তর করে গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
আরও পড়ুন: ১১৬ ইসলামি বক্তার দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে শ্বেতপত্র
তালিকার ৫ নম্বরে আছে মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমীর নাম। তিনি বৃহস্পতিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দুদক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তদন্ত করুক, অসুবিধা কী?’
ধর্ম নিয়ে ‘ব্যবসার’ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যারা এমন অভিযোগ দিয়েছে তারা মিথ্যা বলেছেন। এসব অভিযোগ কোনোভাবেই সত্য নয়। আমরা মানুষকে দ্বীনি দাওয়াত দিয়ে থাকি। আমরা কোনো উচ্ছৃঙ্খল বক্তব্যের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই।’
মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরীর নাম রয়েছে তালিকার ১১ নম্বরে। তিনি ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওয়াজ করি। মানুষকে দ্বীনি দওয়াত দিই। কোনো দুর্নীতিতে আমরা জড়িত না। যদি আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে করুক। কোনো সমস্যা নেই ইনশাল্লাহ।’
গণকমিশনের শ্বেতপত্র নিয়ে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও বিবৃতি দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিবৃতিটি পাঠান সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী।
বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গণকমিশনকে ‘ভুঁইফোঁড় সংগঠন’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি এখনই শক্ত হাতে তথাকথিত এই ভুঁইফোঁড় সংগঠনকে দমন না করে তাহলে ইসলামপ্রিয় আপামর তৌহিদী জনতা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।’
শ্বেতপত্রের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর বলেও দাবি করেন হেফাজত আমির।
গণকমিশনের দেয়া তালিকার ৯৪ নম্বরে আছে ওমর ফারুক যুক্তিবাদীর নাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, তুরিন আফরোজরা আলেমদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এক ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল ফেলেছে। আমরা মনে করি, এটি সরকার ও আলেমদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটি ষড়যন্ত্র।
‘মানি লন্ডারিং, হলমার্ক দুর্নীতিতে আমাদের কোনো নাম নেই। তারপরেও ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক, নবীবিদ্বেষীরা এমন অভিযোগ দিয়েছে। তারা অবশ্যই নাস্তিক।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক দেশটাকে অশান্ত করার একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে আমি মনে করি। হুজুরদের মাঠে নামিয়ে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিল, এর পর সেই তৃতীয় পক্ষ হাতে তালি দিল। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার বাহাদুর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা অবশ্যই বুঝবে।’
তদন্ত করলে অসুবিধা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। আমরা তো দেশেই আছি। আমরা গোপনে পালিয়ে নেই।’
মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলো গোপনে না। এগুলো মাটির নিচেও না। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপিও এসব মাদ্রাসার উপদেষ্টা।’
গণকমিশনের তালিকার বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বিবৃতি দিয়েছে।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে গণকমিশন গঠনের এখতিয়ার তাদের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিদের নেই। দেশে আইন আদালত থাকতে গণকমিশন গঠন দেশের সংবিধানবিরোধী। দেশের ওলামায়ে কেরামের তালিকা করে দুদকে দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। যারা তালিকা তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী ও তিরস্কৃত।’
‘এসব উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড’ শক্ত হাতে দমন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
তালিকায় যাদের নাম
১. মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, ২. মাওলানা সাজিদুর রহমান, ৩. মুফতি রেজাউল করিম, ৪. মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, ৫. মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী, ৬. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (বাশার), ৭. মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, ৮. মুফতি দিলওয়ার হোসাইন সাইফী, ৯. মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী, ১০. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভূজপুরী, ১১. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, ১২. মাওলানা মুহিব খান, ১৩. মুফতি সাঈদ আহমদ কলরব, ১৪. মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, ১৫. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তাহেরী, ১৬. মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী, ১৭. মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, ১৮. মাওলানা বজলুর রশিদ, ১৯. মুফতি নাজিবুল্লাহ আফসারী, ২০. মাওলানা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী, ২১. মুফতি নূর হোসেন নুরানী, ২২. মুফতি কাজী ইব্রাহিম, ২৩. মাওলানা গোলাম রাব্বানী, ২৪. মাওলানা মুজাফফর বিন মহসিন, ২৫. মাওলানা মোস্তফা মাহবুবুল আলম, ২৬. মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবি, ২৭. মাওলানা শায়েখ সিফাত হাসান, ২৮. মাওলানা মোহাম্মদ রাকিব ইবনে সিরাজ, ২৯. মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল, ৩০. মাওলানা মতিউর রহমান মাদানী, ৩১. মাওলানা মুজিবুর রহমান, ৩২. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, ৩৩. মাওলানা হাফিজুর রহমান ছিদ্দীকী, ৩৪. মাওলানা আজিজুল ইসলাম জালালী, ৩৫. মাওলানা মেরাজুল হক কাসেমী, ৩৬. মুফতি মুহসিনুল করিম, ৩৭. মাওলানা আব্দুল বাসেত খান, ৩৮. মাওলানা আবদুল খালেক সাহেব শরিয়তপুরী, ৩৯. মুফতি মাহমুদ উল্লাহ আতিকী, ৪০. মুফতি উসমান গণি মুছাপুরী, ৪১. মাওলানা আবু নাঈম মুহাম্মাদ তানভীর, ৪২. মুফতি শিহাবুদ্দীন, ৪৩. মুফতি মুসতাঈন বিল্লাহ আল-উসওয়ায়ী, ৪৪. মাওলানা আশরাফ আলী হরষপুরী, ৪৫. মাওলানা জাকারিয়া, ৪৬. মুফতি আমজাদ হোসাইন আশরাফী, ৪৭. মুফতি আনোয়ার হোসাইন চিশতী, ৪৮. মাওলানা আতিকুল্লাহ, ৪৯. মাওলানা বশির আহমদ, ৫০. মাওলানা সিরাজুল ইসলাম মিরপুরী, ৫১. মাওলানা রিজওয়ান রফিকী, ৫২. মাওলানা আবরারুল হক হাতেমী, ৫৩. মাওলানা রাফি বিন মুনির, ৫৪. মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম জাবেরী, ৫৫. মাওলানা মোতাসিম বিল্লাহ আতিকী, ৫৬. মুফতি শেখ হামিদুর রহমান সাইফী, ৫৭. মাওলানা আজহারুল ইসলাম আজমী, ৫৮. মাওলানা কামাল উদ্দিন দায়েমী, ৫৯. মাওলানা কামাল উদ্দিন কাসেমী, ৬০. মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন নুরী, ৬১. মাওলানা মাজহারুল ইসলাম মাজহারী, ৬২. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদাউস, ৬৩. মুফতি এহসানুল হক জিলানী, ৬৪. মাওলানা মাহবুবুর রহমান জিহাদি, ৬৫. মুফতি আব্দুল হক, ৬৬. মুফতি শাহিদুর রহমান মাহমুদাবাদী, ৬৭. মাওলানা ইসমাঈল বুখারী, ৬৮. মাওলানা জয়নুল আবেদীন হাবিবী, ৬৯. মাওলানা ইউসুফ বিন এনাম, ৭০. মাওলানা শাববীর আহমদ উসমানী, ৭১. মুফতি জাহিদুল ইসলাম যায়েদ, ৭২. মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম জামী, ৭৩. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ৭৪. মাওলানা ইসমাইল হোসাইন, ৭৫. মুফতি আব্দুর রহিম হেলালী, ৭৬. মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, ৭৭. মাওলানা মুশাহিদ আহমদ উজিরপুরী, ৭৮. মাওলানা কাজিম উদ্দীন (অন্ধ হাফেজ), ৭৯. মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, ৮০. মুফতি হারুনুর রশিদ, ৮১. মাওলানা আবুল কাসেম, ৮২. মুফতি ওয়ালী উল্লাহ, ৮৩. মাওলানা আবু নাঈম মুহাম্মাদ তানভীর, ৮৪. মাওলানা জাকারিয়া নাটোর, ৮৫. মাওলানা আবুল হাসান (সাদী), ৮৬. মুফতি রুহুল আমিন নুরী, ৮৭. মুফতি মামুনুর রশিদ কামালী, ৮৮. মাওলানা আবদুল কালাম আজাদ, ৮৯. মাওলানা ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী (নওমুসলিম), ৯০. মাওলানা শামসুল হক যশোরী (নওমুসলিম), ৯১. মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ, ৯২. মাওলানা মুফতি ওলিউল্লাহ, ৯৩. মাওলানা বেলাল হুসাইন ফারুকী, ৯৪. মুফতি ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, ৯৫. মাওলানা আমির হামজা, ৯৬. মাওলানা মিজানুর রহমান আযহারী, ৯৭. মাওলানা তারেক মনোয়ার, ৯৮. মাওলানা আব্দুল হালিম বোখারী, ৯৯. মাওলানা আতাউল্লাহ হাদেমী, ১০০. মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন, ১০১. মাওলানা মামুনুল হক, ১০২. মুজিবুর রহমান হামিদী, ১০৩. মাওলানা মুশতাকুন্নবী, ১০৪. মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, ১০৫. মাওলানা কুতুব উদ্দীন নানুপুরী, ১০৬. মাওলানা বেলাল উদ্দীন, ১০৭. মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, ১০৮. মাওলানা রুহুল আমিন যুক্তিবাদী, ১০৯. মাওলানা আবুল কালাম বয়ানী, ১১০. মাওলানা রফিকুল্লাহ আফসারী, ১১১. মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমিন, ১১২. মাওলানা মোয়াজ্জেম হোসাইন সাইফী, ১১৩. মাওলানা আলাউদ্দীন জিহাদি, ১১৪. মাওলানা আবু বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া, ১১৫. জৈনপুরী সিলসিলার মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী এবং ১১৬. মাওলানা মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী।