বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সহজের প্রকৌশলী যেভাবে টিকিট কালোবাজারিতে

  •    
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৪৭

এভাবে প্রতি মৌসুমে রেজাউল করিম ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিতেন। রেজাউলের বেশ কিছু সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকিট বিক্রি করে বলে জানায় র‍্যাব।

টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম। প্রতি ঈদ মৌসুমে টিকিট কালোবাজারি করে রেজাউল করিম লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

রেজাউল করিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি জানান, রেজাউল করিম দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে টিকেটিং সিস্টেমে জড়িত রয়েছেন। সহজের আগে তিনি সিএনএস বিডিতেও কাজ করেছেন ছয় বছর। প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক দুই-তিন হাজার টিকিট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন তিনি।

এভাবে প্রতি মৌসুমে রেজাউল করিম ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিতেন। রেজাউলের বেশ কিছু সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকিট বিক্রি করে বলে জানায় র‍্যাব।

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত থাকায় সহজের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১। এর সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকেও।

র‍্যাবের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বিগত বছরগুলোয় করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঈদযাত্রা বন্ধ ছিল। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অধিকসংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ সাধারণ মানুষ রেলওয়ে টিকিট অনলাইনে কিনেছে। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘রাতভর স্টেশনে অপেক্ষা করেও সকালে টিকিট বিক্রির শুরুতেই টিকিট না পাওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে র‍্যাব-১-এর একটি দল এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।’

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অপরাধী চিহ্নিত করা ও তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কমলাপুর স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় সার্ভার রুম থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিমকে আনা হয়। পরে রেজাউলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি রেলওয়ে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।

‘জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে সন্দেহ হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।’

বুধবার রাত ১০টার দিকে রেজাউল ও তার দেয়া তথ্যে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় দুজনের ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে ই-টিকিট জব্দ করে র‍্যাব।

রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‍্যাব জানায়, তিনি ছয় বছর ধরে রেলওয়ে টিকেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে সিএনএস বিডিতে তিনি কর্মরত ছিলেন। পরে সহজ ডটকম টিকেটিংয়ের দায়িত্ব পেলে অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

রেজাউল একজন প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট-সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সঙ্গে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের বদলে তিনি মূলত নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতেন বলেও জানায়।

র‍্যাবের কর্মকর্তা জানান, ‘ব্যক্তিগত পরিচিতদের কাছে টিকিটপ্রতি ৫০০ টাকা বা তার বেশিও নিতেন। আর কালোবাজারে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বেশি দিয়ে টিকিট বিক্রি করতেন তিনি।’

এসব কাজ তিনি ‘ভিআইপিদের টিকিট’-এর আবদার মেটানোর কারণে নির্বিঘ্নে করতে পারছিলেন বলে জানায় র‍্যাব।

আরও কেউ টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত কি না তা বের করতে র‍্যাব অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানানো হয়।

রেলওয়ে টিকেটিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি এক বিবৃতিতে জানায়, তারা অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে রেজাউল করিমকে চার সপ্তাহ আগে নিয়োগ দিয়েছে।

তবে তাদের দাবি, রেজাউল করিম সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার নন, তিনি সাপোর্ট স্টাফ। তাকে গ্রেপ্তার করার পর পরই সহজ তাকে চাকরিচ্যুত করে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

সহজের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদ বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে এ রকম কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি। আমরা টিকিট কালোবাজারি নির্মূলে র‍্যাব এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাব।’

এ বিভাগের আরো খবর