বরিশাল নগরীতে রাস্তা আটকে সিটির কাউন্সিলর ও করপোরেশনের লোকজনের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশে দুপুর থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। পুলিশের আশ্বাসে ৭ ঘণ্টা পর রাস্তা থেকে সরে যান অবরোধকারীরা, যান চলাচল শুরু হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীর উপর যে হামলা হয়েছে, সেই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার মহোদয় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়ায় আমরা সড়ক থেকে সরে যাচ্ছি।’
২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের বিরুদ্ধে ওই ওয়ার্ডের রোড ইন্সপেক্টর রাজীব হোসেন খানকে মারধরের অভিযোগ তোলেন করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিপ্লবের বিচার চেয়ে দুপুর ৩টা থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ঘেরাও করে তারা বিক্ষোভ করেন। করপোরেশনের ময়লার গাড়ি দিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
এর প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন কাউন্সিলর বিপ্লবসহ ১০ কাউন্সিলর ও তাদের অনুসারীরা।
ইফতারের আগে নগরীর সড়ক ও মহাসড়ক থেকে সরে যান অবরোধকারীরা। এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন করপোরেশনের লোকজন।
কাউন্সিলর বিপ্লব ও তার অনুসারীরা তখন এলাকার হোসাইনিয়া মাদ্রাসার মাঠে অবস্থান নেন। তারা অবশ্য সন্ধ্যার পর আর সড়কে নামেননি।
অসুস্থ মাকে হাসপাতাল নিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে বের হয়েছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স করে আমার মাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বের হই। আধাঘণ্টা দাঁড়ানোর পর পুলিশের সহায়তায় বের হতে পেরেছি।’
ওই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা রিচার্ড রবিন বলেন, ‘বানারীপাড়ায় নিজ বাড়িতে যাব, কিন্তু রাত ৮টার দিকে নতুন বাজার থেকে হেঁটে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এমন ভোগান্তিতে কেন আমাদের পড়তে হবে?’
বিএম কলেজ এলাকায় থাকেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘ঝামেলা হচ্ছে নেতাদের মধ্যে, এতে আমরা কেন ভোগান্তিতে পড়ব? দুই দিন পর পর সড়ক অবরোধ কেন হবে? আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।’
হঠাৎ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হতে দেখা যায় অনেককে।
সিহাবুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘পারিবারিক কাজে রূপাতলী যাচ্ছিলাম। বিক্ষোভকারীরা অটোরিকশা ঘুরিয়ে দিলে চরম বিপাকে পড়ি। জিয়া সড়কের সামনে থেকে রূপাতলী পর্যন্ত হেঁটে যেতে হচ্ছে।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম রাত ১১টায় জানান, করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এর পরপরই রাস্তা ছেড়ে দেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
যে কারণে বিক্ষোভ
রোড ইন্সপেক্টর রাজীব হোসেন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি ভবনের প্ল্যান চেক করতে যাওয়ার পর কাউন্সিলর বিপ্লব আমাকে ফোন দিয়ে নানা কথা বলে হোসাইনিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নেন। এরপর তাকে না বলে কেন প্ল্যান চেক করতে গিয়েছি সেই অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর করেন। এরপর অন্য স্টাফরা এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’
এসব বিষয়ে কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে একটা কাজ করতে আসবে সেটা আমিই জানি না। আমার সব স্টাফ নিয়ে গেছে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। আমি শুধু ওই স্টাফকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেছি।’
তিনি রাতে বলেন, ‘একজন কাউন্সিলরকে হেনস্থার চেষ্টা করায় আমিও থানায় অভিযোগ জানাব।’