চুয়াডাঙ্গায় অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ একই পরিবারের ৭ জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে একজনকে ভর্তি রেখে বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন, কুন্দিপুর গ্রামের জমেলা খাতুন, তার তিন ছেলে ইসরাফিল হোসেন, হোসেন আলী ও মুসা করিম, ইসরাফিলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জাকিয়া খাতুন, মুসা করিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন ও হোসেনের স্ত্রী শিউলি খাতুন।
তবে, পুলিশের দাবি কাউকে মারধর করা হয়নি।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর জানান, মঙ্গলবার ঈদে গরুর মাংসের জন্য করা সমিতির টাকা দেয়াকে কেন্দ্র করে কুন্দিপুর গ্রামের হোসেন আলীর সঙ্গে একই গ্রামের মোস্তফার মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হোসেন আলীর বিরুদ্ধে দর্শনা থানায় অভিযোগ করেন আহত মোস্তফা।
বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান অভিযোগের তদন্ত করতে কুন্দিপুর গ্রামে যান। এ সময় পুলিশ দেখে অভিযুক্ত হোসেন আলী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির টিনের চালের সঙ্গে তার কপাল কেটে যায়।
কপাল থেকে রক্ত বের হতে দেখে পুলিশের ওপর চড়াও হয় তার পরিবারের লোকজন ও গ্রামবাসী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেখান থেকে ফিরে আসে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দর্শনা থানা পুলিশ। তবে কাউকে মারধর করেনি পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত হোসেন আলীর মা জমেলা খাতুন বলেন, ‘রাতে গ্রামে পুলিশ আসলে ভয়ে পালিয়ে যায় আমার ছেলে। পরে তাকে ধাওয়া করে আটক করে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। পুলিশের মারধরে আমার ছেলের কপাল কেটে রক্ত বের হয়। একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
‘পরে দর্শনা থানা থেকে অনেক পুলিশ আসে। তখন আমরা মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ করলে আমাকে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়। পরে আমাকে, আমার তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশ সদস্যরা।’
আহত জাকিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার বড় ভাশুরকে মারধর করার পর আমার স্বামীকে খুঁজতে ঘরে আসে পুলিশ। আমি সামনে গেলে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে তারা। ধাক্কা দিয়ে মাটিতেও ফেলে দেয়।
‘আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। কীভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা একজন গর্ভবতী নারীকে মারধর করে? আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, ‘আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে হোসেন আলী মাথা ও চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাকে ভর্তি রেখে অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
এ ঘটনায় পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার দর্শনা থানায় বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। উভয়পক্ষের কথা শোনা হবে। যে অপরাধী হিসেবে প্রমাণ হবে, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’