বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের নাক গলানো প্রত্যাশা করে না সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে দেশটির কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।
গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনা করা হয়।
রিপোর্টটিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই রিপোর্টে অনেক কিছু আছে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।’
রিপোর্টে সমকামিতা একটি অপরাধ এবং এ কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এটি কখনও মেনে নেবে না। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গত এক দশকে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম খাত। কিন্তু গোটা রিপোর্টে এ সম্পর্কে ভালো মন্তব্য নেই।’
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দেয়ার চেষ্টা সরকার ভালো চোখে দেখবে না।
‘বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করেছে। কিন্তু এখানেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ কারণে র্যাবের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিন্দা না করার অনুরোধ জানাব আমি। র্যাব এখন একটি ব্র্যান্ড নেম। র্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জঙ্গি-সন্ত্রাসী প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছে।’
মানবাধিকার প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চাইব যে এই রিপোর্টে যেসব অসংগতিপূর্ণ তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য দেয়া হয়েছে সেগুলো কেন দেয়া হলো এবং যেখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেখানে আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হব।
‘প্রতিবেদনে এমন অনেক উৎস থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে, যাদের পলিটিক্যাল এজেন্ডা রয়েছে। আমরা আশা করব, যাদের কাছ থেকে তারা তথ্য নিচ্ছে, তাদের নিকট অতীত তারা আরও বিস্তারিত জেনে নেবে। নিকট অতীতে তারা কী করেছে, সেটা তাদের জানা থাকা প্রয়োজন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশে ২৭৫টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ৬০৬টি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ আইএলওর আটটি ধারা রেটিফাই করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র মাত্র দুটি ধারা রেটিফাই করেছে। যারা নিজেরাই শ্রম আইনের রেটিফাই করেনি, তারাই আবার অন্যদের পরামর্শ দেয়।’