মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সামুদা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসিডসহ বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল পরিবহন করার সময় মাঝেমধ্যে তা রাস্তাঘাটে পড়ে যাচ্ছে। হাতে-পায়ে লেগে কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে বিষাক্ত এই কেমিক্যাল গ্রহণ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকাবাসী।
খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উৎপন্ন করে যা তৈরি করতে এসিডসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের প্রয়োজন হয়। এ সকল রাসায়নিক পদার্থ এবং কেমিক্যাল গাড়িতে পরিবহন করার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা থাকলেও বিষয়টিতে বরাবরই উদাসীন সামুদা কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে সোমবার (২৫ আগস্ট) ভোর ছয়টার দিকেও কোম্পানির একটি গাড়ি থেকে রাস্তায় হাইড্রোক্লোরিক এসিড পড়ে যায়। কালো ধোঁয়া আর ঝাঁঝালো গন্ধে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে হোসেন্দী ইউনিয়নের সিকিরগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রাস্তায় পানি ছিটিয়ে হাইড্রোক্লোরিক এসিড পরিষ্কার করা হলেও এসিডের ঝাঁঝালো গন্ধ রয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত এক-দেড় বছরে অন্তত পাঁচবার এইরকম ঘটনা ঘটেছে। সিকিরগাঁও থেকে জামালদী বাস স্ট্যান্ডে যাওয়া-আসার পথে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বারংবার এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল গাড়ি থেকে রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ' আজ সকালে কোম্পানির একটি গাড়ি জামালদী বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবার পথে গাড়ি থেকে বিষাক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড রাস্তায় পড়ে যায়। এতে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় চারপাশ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হবার উপক্রম হয় এলাকাবাসীর। এর আগেও বেশ কয়েকবার এরকম অবস্থা তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু কোন লাভ হয়নি'।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ' প্রায় দেখি তাদের গাড়ি থেকে রাস্তায় কেমিক্যাল পড়ে যায়। এসব কেমিক্যাল পরিবহনে যতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করার কথা কোম্পানি তা করছে না'।
এ পথে নিয়মিত চলাচলকারী অটোরিকশা চালক আলী হোসেন বলেন, ' কয়দিন পর দেখি রাস্তায় বিষাক্ত কেমিক্যাল পড়ে যায়। নিঃশ্বাসের সাথে তা গ্রহণ করলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাতে-পায়ে লাগলে চামড়া উঠে যায়। আমরা চাই এই রাস্তায় কেমিক্যালের গাড়ি চলাচলের জন্য একটি সময় বেঁধে দেওয়া হোক'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার ডা. খন্দকার আরশাদ কবির বলেন, 'হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ত্বকে এবং টিস্যুতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এসিড গায়ে লাগলে দ্রুত প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ধুতে হবে। পোশাকে যদি এসিড লাগে তা খুলে ফেলতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে'।
বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ( মানব সম্পদ বিভাগ) মো.হাফিজুর রহমান বলেন, ' আজকের ঘটনায় আমাদের কোন অবহেলা ছিল না। রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া একটি ড্রেজারের পাইপে লেগে আমাদের গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে রাস্তায় হাইড্রোক্লোরিক এসিড ছড়িয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় পানি ছিটিয়ে তা পরিষ্কার করে ফেলে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড রাস্তায় পড়ে ধোঁয়া সৃষ্টি হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে আমি বলবো ভয়ের কোন কারণ নেই'।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, 'এরকম একটি খবর আমিও পেয়েছি। যতটুকু জানতে পারলাম রাস্তার উপর দিয়ে একটি ড্রেজারের পাইপ দিয়েছিল যার কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা ড্রেজারের পাইপ অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছি। স্থানীয়রা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানটির গাড়ি থেকে রাসায়নিক রাস্তায় পড়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে'।
বিষয়টি সম্পর্কে পরিবেশ অধিদপ্তর মুন্সীগঞ্জের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ' বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। নিশ্চয়ই আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব'।