বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগের শঙ্কা

  •    
  • ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৫৭

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ বাড়বে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুর ছাড়বেন অনেকেই। তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে পারেন তারা।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটি) ধীরগতির নির্মাণকাজ, সড়কে বিভাজন না থাকা, মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ বাজার, সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপসহ বেশ কয়েকটি কারণে এবার দুর্ভোগ আগের চেয়েও বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়কে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ বাড়বে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের চেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কপথে উত্তবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এই পথ। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সরকারের মেগা প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ।

কোথাও উড়াল সেতুর স্ল্যাব বসানো, কোথাও সড়ক মেরামত আবার কোথাও চলছে উড়াল সেতুর পিলার নির্মাণকাজ। সড়কের একদিকে চলছে উন্নয়নকাজ, অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন।

এ কারণে সারাবছরই সড়কটিতে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। ঈদের সময় সেই যানজট বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে স্বাভাবিকভাবে। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও ঈদযাত্রায় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশ।

তবে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উড়াল সড়ক ও ওভারপাস সড়কের লেনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। ঈদযাত্রার কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ঈদের আগে সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এ পথটুকু যেতে কখনো কখনো তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ও লেগে যাচ্ছে। তবে টঙ্গী কলেজগেইট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কটির প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকলেও বাকি অংশে তা নেই।

সড়কের ওপরে উড়াল সেতু এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কোথায় কোথায় সাময়িক চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী কার্পেটিং করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের তিন লেন কোথাও কোথাও এক লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

বিআরটির ধীরগতির নির্মাণকাজ

আব্দুল্লাহপুর পার হলেই টঙ্গী। আর দুর্ভোগের শুরুটাও এখান থেকেই। টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার স্টেডিয়ামের সামনে উড়ালসড়কের কাজ চলছে। এর ফলে ওই জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় স্টেশন রোড পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ফিট জায়গা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা। এ কারণে সড়কটির দুই পাশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

স্টেশন রোড পেরিয়ে আরেকটু সামনে এগোলেই মিলগেইট এলাকা। এখানে আনুদিপ সিএনজি স্টেশনের সামনে মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে বিআরটির পিলার নির্মাণের জন্য বড় বড় দুটি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকামুখি লেনে গাড়ি চলছে সংকুচিত এক লেনে।

মিলগেইট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং হয়নি। মিলগেইট পার হয়ে চেরাগআলী মার্কেটের আগ পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সেতুর পিলার। কলেজগেইট এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানে চলছে উড়ালসেতুর গাড়ি ওঠা-নামার লেন।

কলেজগেইট পেরিয়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি কলেজের সামনে বিআরটির স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও মহাসড়কের দুই পাশের লেন সংকুচিত হওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এ পথ ধরে কুনিয়া বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান। সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

১২ কিমি সড়কে নেই রোড ডিভাইডার

টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বিআরটির কাজ চলমান। এই সড়কে অধিকাংশ জায়গাতেই নেই সড়ক বিভাজন বা রোড ডিভাইডার। কোথাও কোথাও শুধু বাঁশ দিয়ে ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। উল্টোপথে যে যার মতো গাড়ি নিয়ে চলাচল করছেন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য

মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গাজীপুরের কোথাও সেটি মানা হচ্ছেনা।

নগরীর টঙ্গী, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণ এই ধীরগতির বাহন।

মহাসড়কে চলছে নির্মাণকাজ। ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা। ছবি: নিউজবাংলা

মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ বাজার

বিআরটির নির্মাণকাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তার ওপর মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে বসানো অবৈধ বাজার। টঙ্গী বাজার মিতালি ফিলিং স্টেশন থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বসেছে শতাধিক দোকান। চেরাগআলী এলাকায় সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে মহাসড়কের ওপর ভ্যানগাড়ি বসিয়ে বসানো হয়েছে অবৈধ বাজার।

গাজীপুর মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়েশা আক্তার আশা ও তার ছোট ভাই ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন এই ভ্যান বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ। আরও কয়েকটি এলাকার চিত্রও এমন।

সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ

চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়কের মাঝখানেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিআরটির নির্মাণ সামগ্রী। মহাসড়কের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে কংক্রিটের তৈরি স্ল্যাব, লোহা, রোলার ও ভেকু।

এ বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক (সেতু বিভাগ) মহিরুল ইসলাম খান জানান, টঙ্গী অংশের নিচের সড়কের প্রায় ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০ রমজানের পর থেকে ঈদের সময় মহাসড়কের নিচের সড়কে কোনো নির্মাণকাজ বা খোঁড়াখুঁড়ি হবেনা।

তিনি জানান, তবে উড়াল সড়ক ও পিলারের ওপরে স্ল্যাব বসানেরা অন্যান্য কাজ চলবে। ঈদের আগেই সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হবে।

ঈদযাত্রায় যাত্রীরা যেন দুর্ভোগে না পড়েন সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ চলছে জানিয়ে মহিরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের বিভিন্ন টিম দুইবার মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছে। ঈদযাত্রায় যাতে কোনভাবেই ভোগান্তি না হয় সেজন্য দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, তবে ট্রাফিক ম্যানেজন্ট ঠিকভাবে করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধমে মহাসড়কে অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল বন্ধ, যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা এসব বন্ধ করতে পারলে মহাসড়কে যানজটের সমস্যা হবে না।

ঈদের সময় যানজট পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমদ সরকার।

তিনি বলেন, প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চলাচল করে। রাস্তা ভালো না হলে এবার ঈদযাত্রায় যানজট থেকেই যাবে।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুন। আমাদের ট্রাফিকের জনবল ৩০০। ঈদ উপলক্ষে পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ ঘণ্টা ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম দেয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। তবে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ ঘণ্টা ডিউটির পর ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফের ৮ ঘন্টা ডিউটি করবেন ট্রাফিক সদস্যরা। এ ছাড়া থানা পুলিশের সদস্যরাও ঈদের সময় মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তবে আমরা বিআরটির কাজে দায়িত্বরতদের বলেছি সড়ক সংষ্কার করে দিতে। তারা আশ্বাস দিয়েছে ঈদের আগেই সেগুলো সমাধান করবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ কম ছিল। তবে এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে।

পোশাক কারখানার শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে প্রায় ২০ লাখ পোশাক শ্রমিক রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পোশাক কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি যেন শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে ছুটি দেয়। এ ছাড়াও কারখানার ভেতর থেকেই রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি।

মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাজারের বিষয়ে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে মামুন বলেন, থানা পুলিশ অবৈধ বাজারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই ডাম্পিং করা হচ্ছে অটোরিকশা-ইজিবাইক।

মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর