সবার সামনে র্যাবের মোটরসাইকেলের বহর। তাদের পেছনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর পুলিশের সোয়াট টিম, তাদের পরের সারিতে ডিবি পুলিশের একটি দল। তাদের পেছনে পুলিশের আরেকটি দল। এরপর স্কাউট-বিএনসিসির একটি দল। তার পেছনে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রার শেষাংশেও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের উপস্থিতি।
সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে যখন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, তখন শোভাযাত্রার মিছিলটি ছিল নিরাপত্তার বেষ্টনীময়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই বেষ্টনীর মধ্যে মূল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া সাধারণ মানুষ প্রায় ঢাকা পড়ার জোগাড়।
কয়েক বছর ধরেই পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় এ রকম কড়া নিরাপত্তার আয়োজন চোখে পড়ছে। বিষয়টিকে অনেকে ‘দৃষ্টিকটূ’ ও ‘বাড়াবাড়ি’ বলে সমালোচনা করছেন।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পয়লা বৈশাখ রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রসরোবর ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি জনবল নিযুক্ত ছিল।
সকালের আয়োজনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে ও দুই পাশে পুলিশের এই উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে।
নিরাপত্তাকাজে পুলিশের উপস্থিতিকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে উল্লেখ করেছেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই এই বাড়াবাড়িটা চলছে। আপনি অনেক দূর থেকে চেক করে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। জায়গায় জায়গায় সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চালাচ্ছেন, তার পরও শোভাযাত্রায় এত পুলিশ কেন? সামনে সারি সারি পুলিশ রেখেছে, কিন্তু পাশে ও পেছনে ফাঁকা। আর এভাবে নিরাপত্তার নামে বাড়াবাড়ির মধ্যে শোভাযাত্রা হয় না।’
তবে এতকিছুর মধ্যে শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষের বিপুল অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘একে তো রমজান, তার মধ্যে এই নিরাপত্তার ইস্যু। এর মধ্যে যে এত মানুষ অংশ নেবে, এটা আমাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। এভাবে নয়।’
সরেজমিন দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় যারা অংশ নিতে চেয়েছেন, সবাই তা পেরেছেন। শুধু যাত্রা শুরুর পর মাঝখান থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি, যা কয়েক বছর ধরেই করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি প্রসঙ্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হুমকি ছিল। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল। এ ছাড়া পুলিশের নিজস্ব নজরদারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ধর্মীয় চরমপন্থি সংগঠনের তৎপরতার তথ্য পাওয়া যায়। এ কারণে শুধু মঙ্গল শোভাযাত্রা নয়, বর্ষবরণের পুরো আয়োজন ঘিরেই ছিল বাড়তি নিরাপত্তা।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অধিকসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অনুষ্ঠানস্থলগুলো ঘিরে মোতায়েন ছিল। মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু অন্যান্যবার শোভাযাত্রায় যেসংখ্যক জনসমাগম হয়, এবার রমজানের কারণে কম হয়েছে। এ কারণে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বেশি চোখে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কোনো ছাড় দিতে চাইনি। যে কারণে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল।’
এবারের বর্ষবরণে স্থলপথের পাশাপাশি আকাশ ও নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক টহল রাখা হয়েছিল।
বর্ষবরণের অনুষ্ঠান ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছিল পুলিশ। তবে কেউ যেন নাশকতা চালাতে না পারে, সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়।
বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের কারণ জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ১২ এপ্রিল এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ‘২০০১ সালকে মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হচ্ছে। রিসেন্টলি কিছু বন্ধুরাষ্ট্র জঙ্গিদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দিচ্ছে।
‘উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু রেডিক্যালাইজড সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করছি। সে কারণেই আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা।’