বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদবাজারে বৈশাখী কেনাকাটায় ভাটা

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১১:১১

করোনা মহামারিতে বিগত দু’বছর ফ্যাশন হাউজ ও শপিংমলের সাধারণ পোশাক বিক্রেতাদের টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ বছর অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্ষবরণ আর ঈদুল ফিতর কাছাকাছি সময়ে চলে আসায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে বৈশাখী কেনাকাটায়। তবে ঈদের কেনাকাটা জমজমাট।

বাঙালি সত্তার আবেগের এক উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের এই আগমনকে বরণ করে নিতে প্রতি ঘরেই থাকে নানামুখী প্রস্তুতি। সার্বজনীন এই উৎসবের পাশাপাশি ঈদুল ফিতরও প্রতিটি মুসলিম পরিবারের বড় ধর্মীয় উৎসব।

পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতর- এ দুই উৎসবকে সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি। সবার চেষ্টা থাকে নতুন পোশাক পরে উৎসবে শামিল হওয়ার। সে লক্ষ্যে প্রতিবছরই নতুন পোশাকের পসরা খুলে বসে বিপণি বিতান ও ফ্যাশন হাউজগুলো।

করোনা মহামারিতে বিগত দু’বছর ফ্যাশন হাউজ ও শপিংমলের সাধারণ পোশাক বিক্রেতাদের টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ বছর অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্ষবরণ আর ঈদুল ফিতর কাছাকাছি সময়ে চলে আসায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে বৈশাখী কেনাকাটায়। তবে ঈদের কেনাকাটা জমজমাট।

পবিত্র রমজানের শুরু থেকেই মানুষ যার যার সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটায় নেমে পড়েছে। মাঝে পড়ে পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা অনেকটাই ম্লান।

বর্ষবরণ আর ঈদুল ফিতর কাছাকাছি সময়ে চলে আসায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে বৈশাখী কেনাকাটায়। ছবি:সাইফুল ইসলাম

বিক্রেতারা বলছেন, বৈশাখ ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে যাওয়ায় এবার বৈশাখী পোশাকের ঢংয়ে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। একই পোশাক যাতে দুই উৎসবেই মানানসই হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখেছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের কয়েকদিন আগে শুধু বৈশাখকে ঘিরে কেনাকাটা করা লোকের সংখ্যা কম। তবে ক্রেতাদের জন্য ঠিকই নতুন পোশাকের আয়োজন করেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে তারা সামান্য মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে নিচ্ছেন। বৈশাখী বিক্রিতে ভাটা পড়লেও ঈদের বিক্রি বাড়ায় সন্তুষ্ট তারা।

মূল্য বৃদ্ধির কিছু অভিযোগ থাকলেও দুই বছর পর নিশ্চিন্তে মার্কেটে সশরীরে এসে শপিং করতে পারায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন ক্রেতারাও। আর বৈশাখ ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় ঈদের পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রে তারা বৈশাখকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে ক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ইয়েলোতে বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। ক্রেতার হতে পছন্দের পোশাকটি তুলে দিতে ব্যস্ত তারা। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন কেনাকাটা করতে। কেউ আবার একাকী ঘুরে ঘুরে পরিবারের জন্য শপিং করছেন। সব মিলিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে মুখর শপিংমল।

রাজধানীর বিভিন্ন সুপার মার্কেটে রমজানের শুরু থেকে মানুষ যার যার সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটায় নেমে পড়েছে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের বিকেল ৩টার চিত্র অবশ্য অতোটা জমজমাট ছিল না। ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি থাকলেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা। তারা বলেন, বৈশাখী বিক্রি নেই বললেই চলে। তবে ঈদের বিক্রি বাড়ছে। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের।

আজিজ ‍সুপার মার্কেটের ফ্যাশন হাউজ লণ্ঠণের স্বত্বাধিকারী উজ্জ্বল আকাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্কেটে তেমন লোকজন নাই। বৈশাখ মাসে রমজান চলে আসায় বৈশাখের বেচা-বিক্রি নাই।’

ফ্যাশন হাউস অঞ্জন’স-এর শো-রুমে ঘুরে ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছিলেন কর্মজীবী এক নারী৷ এই ক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের শপিং করতেই এসেছি৷ তবে যেহেতু সামনে পহেলা বৈশাখ, সেজন্য প্রথম গুরুত্বটা বর্ষবরণকেই দিয়েছি।’

পোশাকের দাম বেশি মনে হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর ধরে শপিংমলে আসা হয়নি। তাই তুলনাটা করতে পারছি না। তবে অনলাইন অর্ডার দিয়ে পণ্য নিতে ডেলিভারি চার্জ দিতে হয়। সে হিসাবে দাম তেমন একটা বাড়েনি।’

ঈদের শপিং করতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পোশাকের দাম একটু বেশি। আগে যে দামে নিয়েছি আজ দেখলাম তার চেয়ে অনেকটা বেশি মূল্যের ট্যাগ লাগিয়ে রাখা হয়েছে।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হাসান মাহমুদ ফ্যাশন হাউজগুলোতে প্রচুর সময় নিয়ে পোশাক দেখছিলেন। পছন্দ হলে সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রিয়জনদের কাছে। সায় মিললেই সেটি কিনে নিচ্ছেন।

ঈদ আর পহেলা বৈশাখের মধ্যে কোন উৎসবকে প্রাধান্য দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে দুটি উৎসবই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটির সমন্বয় করে পোশাক পছন্দের চেষ্টা করছি। তবে পোশাকের দাম বেশি মনে হচ্ছে।

ঈদ ও পহেলা বৈশাখের উৎসব এক মাসে পড়ে যাওয়ায় নতুন কৌশল নিয়েছে ফ্যাশন হাউজ অঞ্জন’স। বসুন্ধরা শপিং মল আউটলেটের ব্যবস্থাপক কাওসার আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতা যেন দুটি উৎসবেই একটি পোশাক পরতে পারেন সে বিষয়টি ভেবেছি আমরা। স্বাভাবিকভাবে পহেলা বৈশাখে আলাদা একটা মোটিফ থাকে লাল-সাদা। এবার তা থেকে পোশাকগুলো মাল্টি কালার করেছি।’

এবার পহেলা বৈশাখের তেমন একটা ক্রেতা পাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অফিসিয়াল প্রোগাম ঘিরে কিছু ক্রেতা আছে পহেলা বৈশাখের। স্কুলের কিছু ক্রেতা আছে। তবে ঈদের বেচা-বিক্রি ভালো। খুব রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।’

পোশাকের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘দাম আসলে ততোটা বাড়েনি। সবকিছুর খরচ বেড়েছে। ফলে কিছুটা দাম বাড়ছে। আগে যে পাঞ্জাবির দাম ছিল ১৯০০ টাকা, তা দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের দেশাল আউটলেটের ব্যবস্থাপক ইব্রাহীম সজীব বলেন, ‘রমজান ও বৈশাখ কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় বৈশাখের কেনাকাটায় প্রভাব পড়েছে। তবে সবাই তো আর আলাদা করে বৈশাখের শপিং করে না। কিছু লোকজন এটা করে। তাদের জন্য আমাদের বৈশাখের নতুন কালেকশন আছে। বেচাকেনা মোটামুটি ভালো। ১৪ তারিখের মধ্যে বিক্রি আরও বাড়বে।

‘বৈশাখকে কেন্দ্র করে স্পেশাল শাড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস ও ওয়ান পিস আছে। এসব পণ্যের দামও ক্রোতার নাগালের মধ্যে রয়েছে।’

বিক্রিতে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমন্বয় হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেচা-বিক্রি ভালো। তবে আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশি। দিন যত যাবে সেলের পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর