হিজাব ইস্যুতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার তিন দিন কেটে যাওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, ধরণী কান্ত তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির জবাবদিহি এড়াতেই সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালকে পরিকল্পিত ‘হিজাব বিতর্কে’ জড়িয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি জিডি করে হিজাব বিতর্ক তৈরির দায় এড়াতে চাইছেন।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, রোববার সন্ধ্যায় জিডি করেন ধরণী কান্ত। এতে ভাঙচুরের জন্য অজ্ঞাতপরিচয় দেড় শ জনকে দায়ী করা হয়েছে।
জিডিতে বলা হয়, স্কুলের একটি তুচ্ছ ঘটনার জেরে গুজব ছড়িয়ে গত ৭ এপ্রিল স্কুলে হামলা চালানো হয়। আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ হামলা করে স্কুলের চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে।
হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেন আইনের আওতায় আনা হয় সে কারণে জিডি করেছেন বলে জানান ধরণী কান্ত।
তবে স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহাদত হোসেন রতন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক নিজেকে বাঁচাতে দায়সারাভাবে জিডি করেছেন। জিডি করার মাধ্যমে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন, স্কুলের হিজাব ইস্যুতে তার কোনো হাত নেই। তিনি শান্তির পক্ষে আছেন। তবে সবাই তার সব কুকীর্তির কথা জানে।’
- আরও পড়ুন: নওগাঁর স্কুলে ‘হিজাব বিতর্কের’ পেছনে কী?
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরার কারণে কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে মারধরের তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনের বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে
তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, হিজাবের কারণে কাউকে মারা হয়নি। স্কুলের নির্ধারিত পোশাক না পরার কারণে গত বুধবার আমোদিনী পালসহ দুই শিক্ষক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি, বারবার সতর্ক করার পরও স্কুল ইউনিফর্ম না পরার কারণে তাদের ‘শাসন’ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষক ও কর্মচারী নিউজবাংলাকে জানান, স্কুলে নিয়োগ বিনিময়ে প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। নিয়োগের সময় নেয়া অর্থ স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডে দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি ধরণী কান্ত।
কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগামী ১০ মে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হবেন আমোদিনী পাল। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে যেন ধরণী কান্ত বর্মণের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চাইতে না পারেন সে জন্য সহকারী আরেক শিক্ষক রবিউল ইসলামকে নিয়ে হিজাব বিতর্ক তৈরি করা হয়।
নিউজবাংলা কথা বলে আমোদিনী পালের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধরণী কান্ত তার পছন্দের কোনো এক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেন আমি কোনোভাবেই প্রধান শিক্ষক না হতে পারি সে জন্যই আমার বিরুদ্ধে হিজাব বিতর্ক ছড়িয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনও ধরণী কান্ত বর্মণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছে। যারা অন্যায় করে টাকা লোপাট করল তাদের বিচার হচ্ছে না। মাঝখান থেকে সবার কাছে আমাকে এত হেয় করা হলো।’
হিজাব পরায় মারধরের অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে তিন সদস্যের কমিটি। মহাদেবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, সোমবার কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এর আগে এ বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।