বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে উদীচীর সাংস্কৃতিক সমাবেশ

  •    
  • ৮ এপ্রিল, ২০২২ ২০:৪৫

সঙ্গীতা ইমাম বলেন, ‘সেই ক্লাসে ছিল দশম শ্রেণির ছাত্ররা। তারা কেউ কেস ফাইল করেনি, করেছে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান বা অফিস সহকারী, যে ক্লাসেই ছিল না। এ থেকে বোঝা যায়, নামের কারণে হৃদয় মণ্ডলকে ভিকটিম করা হয়েছে।’

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ক্লাসে দেয়া বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করে ধর্মীয় অবমাননার ‘ভুয়া’ অভিযোগে গেপ্তারের প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

সমাবেশ থেকে তারা হৃদয় মণ্ডেলের মুক্তি এবং যারা তার নামে মামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘পাঠদানের সময় ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগ তুলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়ন্ডলকে আটকের প্রতিবাদে’ এই সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করেন সংগঠনটি।

উদীচীর সংগীত বিভাগের কর্মীদের পরিবেশনায় গণসংগীত দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশের শুরুতে অনুষ্ঠান সঞ্চালক, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনওয়ার তপন বলেন, ‘যুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান পড়ানোর কারণে যদি কোনো শিক্ষককে জেলখানায় যেতে হয়, তাহলে এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু এই শাসকগোষ্ঠী এই দেশটিকে এমন স্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে যেখানে আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতিকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ফলে এখানে মুক্তবুদ্ধি চাপাতির খড়গের নিচে।’

তিনি বলেন, ‘এখনো কেনো বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল আটক অবস্থায় আছে, তার কী অপরাধ সেটা আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই। যদি কোনো অপরাধ না থাকে তাহলে যারা এটির পিছনে, তাদের গ্রেপ্তার করা হোক।’

উদীচীর ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফ নুর বলেন, ‘সরকারকে বলব আপনারা কোন নীতিতে দেশ চালাবেন আগে সেই নিয়ত ঠিক করুন। আপনারা যখন শাহবাগে গণ সমাবেশ দেখেন তখন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চলবে; আর যখন শাপলা চত্বরে গণজমায়েত দেখেন তখন বলেন, দেশ চলবে মদিনা সনদে। সুতরাং আপনারা আগে আপনাদের নিয়ত ঠিক করুন। অন্যথায় জনগণ আপনাদেরকে নিয়ত ঠিক করতে বাধ্য করবে।’

অনতিবিলম্বে হৃদয় মণ্ডলকে মুক্তি দেয়া না হলে উদীচী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, ‘একজন ছাত্র শিক্ষককে প্রশ্নবানে জর্জরিত করছেন আর প্রশ্নগুলো এমন প্রশ্ন যেগুলো শুধু একজন মৌলবাদীর মাথায় আসতে পারে। আমরা যখন বিবর্তনবাদ পড়ব তখন তো আমরা ধর্মকে আনব না।’

তিনি বলেন, ‘সেই ক্লাসে ছিল দশম শ্রেণির ছাত্ররা। তারা কেউ কেস ফাইল করেনি, করেছে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান বা অফিস সহকারী, যে ক্লাসেই ছিল না। এ থেকে বোঝা যায়, নামের কারণে হৃদয় মণ্ডলকে ভিকটিম করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটাই কি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ? যখন হৃদয় মণ্ডল গ্রেপ্তার হন, লতা সমাদ্দার হেনস্তার শিকার হন তখন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের সেই সোনার বাংলা আর নেই৷ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ লাগবে।’

যারা এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে নষ্ট করতে চায় তাদেরকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে হৃদয় মণ্ডলকে মুক্ত করার কথা জানান তিনি।

অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার মতো একজন শিক্ষক বিজ্ঞান পড়ানোর জন্য কারাগারে নিক্ষেপিত হয়েছেন। ছাত্ররা বিধি লঙ্ঘন করে যে ক্লাসে মোবাইল এনেছেন, প্রধান শিক্ষক সেটি লক্ষ্য করেননি। তিনি বিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং অফিস সহাকরীকে দিয়ে মামলা করিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক আচরণও করেছেন। অবিলম্বে হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চাই। আশা করি বিজ্ঞ আদালত আগামী ১০ তারিখ ভুল করবেন না।’

এই নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবার সম্মিলিত আন্দলোনে হৃদয় মণ্ডল মুক্ত হবেন। তখন আমাদের সামনে এসে আবারও বলবেন, বিজ্ঞান প্রমাণিত বিষয় আর ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়। যারা আজকে হৃদয় মণ্ডলকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন ইতিহাস তাদেরকে মনে রাখবেন না; কিন্তু হৃদয় মণ্ডলকে ঠিকই মনে রাখবে।’

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কে এন রাশেদার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, প্রগতীলেখক সংঘের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া তুনি, ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায় প্রমুখ।

এ ছাড়া সমাবেশে সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকা মহানগর উদীচীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাইশা সুলতানা উর্মী, একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কেন্দ্রীয় উদীচীর আবৃত্তি সম্পাদক নিজামুর রহমান সুমন।

এ বিভাগের আরো খবর