বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে শিক্ষক সিরাজাম মুনিরাকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তার বকেয়া বেতন ও প্রাপ্য অন্যান্য সুবিধা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষক মুনিরার দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একইসঙ্গে রুল জারি করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৩ জুন তাকে নিয়ে ফেসবুকে একটি কটুক্তিমূলক পোস্ট দেন সিরাজাম মুনিরা। পরক্ষণেই তিনি সেটি মুছেও ফেলেন। কিন্তু ততক্ষণেই স্পর্শকাতর এই পোস্ট নজরে চলে আসে অনেকের। স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এরপর ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সিরাজাম মুনিরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক মুনিরাকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেন রংপুরের সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ড. মো. আব্দুল মজিদ। এরপর তিনি পেশা ও পদে ফিরতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘সাময়িক বরখাস্তের’ আদেশ প্রত্যাহার করেনি। এ অবস্থায় গত ৩ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন সিরাজাম মুনিরা। রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাময়িক বরখাস্তের’ আদেশ প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করে।
রুলে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে সিরাজাম মুনিরাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে পুনর্বহাল করে বকেয়া বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রংপুরের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মুনিরাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলেও তিনি পেশায় ফিরতে পারছেন না। গত ৯ জানুয়ারি মুনিরা পদে ফিরতে আবেদন করলেও তা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুনিরাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, মামলাটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি এখনও সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তাই তাকে পুনর্বহাল করা যাবে না। এরপরই তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। আদালত শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।