ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালু করার অনুমতি পাচ্ছে না দুই এয়ারলাইনস এয়ার অ্যাসট্রা ও ফ্লাই ঢাকা।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য এই মুহূর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন করে কোনো এয়ারলাইনসকে জায়গা দেয়ার সুযোগ নেই বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের আকাশপথের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক বলছে, এয়ারলাইনসগুলো যদি ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম বা সিলেটে বেস স্থাপন করতে চায় তাহলে কর্তৃপক্ষের আপত্তি নেই।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই এয়ারলাইনসকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দিয়েছি। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে একটি বাধ্যবাধকতা আছে সেটা হলো, শাহজালালে এখন তৃতীয় টার্মিনালের ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে, আমরা কাজ করছি। এজন্য রাতে ফ্লাই হয় না।
‘আর টার্মিনালের কাজের জন্য আমাদের দুটো অ্যাপ্রোন ভেঙে ফেলতে হবে এই বছরের শেষের দিকে। এ কারণে এখানে জায়গা কম। এখন ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘তারা যদি চট্টগ্রাম বা সিলেট থেকে ফ্লাইট চালু করতে চায় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের অনুমতি দিয়ে দেব। আমরা তাদের জানিয়ে রেখেছি। তাদের যেহেতু এয়ারক্রাফট নিতে হবে, পাইলট ক্রু রিক্রুট করতে হবে, এগুলোতে সময় লাগবে।
‘তাদের বলে দিয়েছি ঢাকা থেকে অপারেট করতে চাইলে ডিফিকাল্ট হবে’, যোগ করেন তিনি।
অবশ্য বেবিচকের এ সিদ্ধান্ত এখনও না জানার কথা জানিয়েছেন এয়ার অ্যাসট্রার প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফ।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় বেস করতে পারব না, এমন কিছু সিভিল এভিয়েশন আমাদের জানায়নি। আমাদের তারা যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে আমাদেরকে সেলস এবং চেকইন কাউন্টার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানে শুধু বলা হয়েছে, রাত্রিকালীন পার্কিংয়ের জন্য ঢাকায় জায়গা না দিতে পারলে অন্যত্র প্রস্তুতি রাখতে হবে।
‘এখন ঢাকার বাইরে পার্কিং করতে হলে সেখানে প্রতিদিনের ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সপেকসনের জন্য টেকনিক্যাল স্টাফ রাখতে হবে। পাশাপাশি একসেট ক্রু সেখানে রাখতে হবে যাতে ফ্লাইটটি উড়িয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা যায়। তারপর আর সারাদিন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এখানে বেস করা যাবে না এমন কিছু চিঠিতে বলা হয়নি।’
কবে নাগাদ এয়ার অ্যাসট্রা ফ্লাইটে আসবে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘আমরা দুটি এটিআর আগেই সংগ্রহ করে চুক্তি সই করেছি। বাকি দুটির বিষয়টা আটকে ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। সেটিও এখন সিকিউর করতে পেয়েছি।
‘এগুলো হয়তো ঈদের পরে আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে। আমরা আশা করছি, সব কিছু ঠিক থাকলে জুন থেকে ফ্লাইট শুরু করতে পারব।’
দুই এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলে দেশে বেসরকারি এয়ারলাইনসের সংখ্যা দাঁড়াবে চারে। এর ফলে এভিয়েশন খাতে অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্লাই ঢাকার মূল মালিকানায় রয়েছেন সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। আর এয়ার অ্যাসট্রার মালিকানায় রয়েছেন এক জাপান প্রবাসী ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এয়ারলাইনস ফ্লাইট শুরুর পর প্রথম এক বছর আবশ্যিকভাবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক বছর পর আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড়ালের অনুমতি চাইতে পারে এয়ারলাইনস।
গত ২৫ বছরে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার।
সর্বশেষ করোনার মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে আরেকটি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ার। কয়েক দফা চালুর কথা বললেও আর ফ্লাইটে ফেরেনি এয়ারলাইনসটি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে জিএমজি, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালাত।
দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়া ফ্লাইটে রয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার।