বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোহেলের পরীক্ষায় পাশ মালবেরি

  •    
  • ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:১৮

দেখতে সুন্দর আর আকর্ষণীয় এই ফল পাকলে রসাল ও টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। তৈরি করা যায় চারাও। খুব সহজে এটিকে ছাদেও চাষ করা সম্ভব।

গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। এর কিছু সবুজ, কিছু লাল আর পেকে কালো হয়ে গেছে কিছু। পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি!

উচ্চ মূল্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি এই ফল এখন চাষ হচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী নওগাঁ জেলায়। পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশের ৮টি জাত সংগ্রহ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সোহেল রানা। বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা তিনি। প্রথমবারেই ভালো ফলন দেখে বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষের পরিকল্পনা করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহেলের মালবেরি গাছগুলোর পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত আর সূচালো অগ্রভাগ।

আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় এই মালবেরি ফল। ছবি: নিউজবাংলা

আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় মালবেরি এই ফল। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ফল পাকতে শুরু করে। প্রথমে এই ফলটি থাকে সবুজ, পরে লাল হয় ধীরে ধীরে। আর সম্পূর্ণ পেকে গেলে তা কালো রং ধারণ করে।

দেখতে সুন্দর আর আকর্ষণীয় এই ফল পাকলে রসাল ও টক-মিষ্টি স্বাদের হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। তৈরি করা যায় চারাও। খুব সহজেই এটিকে ছাদেও চাষ করা সম্ভব।

মালবেরি চাষ নিয়ে উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ‘ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৮টি জাত সংগ্রহ করে চাষ করেছি। পরীক্ষামূলক হলেও প্রতিটা গাছেই সাফল্য এসেছে। প্রচুর ফল ধরেছে।’

সোহেল জানান, মালবেরি চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশক তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়।

মালবেরির গাছে পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি। ছবি: নিউজবাংলা

যেহেতু মালবেরি একটি আমদানিনির্ভর ফল, তাই বাজারেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সুপার শপগুলোতে বিক্রি হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে।

বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সোহেল বলেন, ‘ইতোমধ্যে চারটি জাত পছন্দ করেছি। চারা তৈরি করে এক বিঘা জমিতে ৪০০টি গাছ নিয়ে মালবেরি চাষ করব। আমার নতুন এই ফল দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছেন। ইতোমধ্যে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মহোদয় এই গাছগুলো দেখে গেছেন। বাণিজ্যিক বাগান তৈরি করতে উৎসাহ দিয়েছেন।’

নওগাঁ শহর থেকে বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে ঘুরতে আসা স্কুলশিক্ষক উম্মে সেহেলী সুলতানা বলেন, ‘এখানে ঘুরতে এসে দেখলাম বিদেশি মালবেরির গাছ লাগানো হয়েছে। গাছগুলোতে প্রচুর ফলও ধরেছে। দেখে খুবই ভালো লাগল। একটি ফল খেয়ে দেখলাম, অনেক সুস্বাদু। আমি এখান থেকে চারা নিয়ে আমার বাড়ির ছাদে লাগাব বলে পরিকল্পনা করেছি।

মালবেরি ফল দেখতে আসা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ফলটি দেখতে খুবই সুন্দর লাগল এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। আমিও সোহেল রানার কাছ থেকে চারা নিয়ে আমার ছাদে লাগাব।’

বিভিন্ন দেশের ৮টি জাতের মালবেরি সংগ্রহ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর সোহেল রানা। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় মোসাব্বের আহম্মেদ বলেন, ‘সোহেল ভাইয়ের বাগানে এই মালবেরি ফলের গাছ দেখে খুবই অবাক হয়েছি। এই ফলটি আমাদের এলাকায় আগে কখনো দেখিনি। শুনলাম বাজারে নাকি এর অনেক চাহিদা। দামও বেশি। তাই কৃষকরা এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে ব্যাপক লাভবান হবেন বলে আমি মনে করি।’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সোহেল রানা একজন সফল বাগানি। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ফল, ফুল, আমসহ নানা ধরনের বাগান আছে তার। সম্প্রতি তিনি ৮ জাতের মালবেরি চাষ করেছেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফলগুলো সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। ৮টি গাছের প্রতিটিতে ৮ থেকে ১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে।’

নওগাঁর মাটি মালবেরি চাষের উপযোগী জানিয়ে শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এখানে মালবেরি চাষ বাড়াতে আমরা চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর