বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উদ্যোক্তা হওয়া হলো না মাইশার

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২২ ২০:১৭

মাইশার পরিবার জানায়, প্রতিবাদী স্বভাবের মেয়ে ছিলেন মাইশা। কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারতেন না। ছিল মানবিক গুণাবলি। গরিব ও অসহায়দের জন্য সব সময় কাজ করার ইচ্ছা ছিল তার। কখনও কখনও ১০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকাও দিতেন মাইশা। তাই বড় হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল, যেন মানুষের কল্যাণে পাশে থেকে সহযোগিতা করতে পারেন।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন মাইশা মমতাজ মীম। স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হবেন। সে জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি না পড়ে ভর্তি হয়েছিলেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যায়ের ইংরেজি বিভাগে।

মাইশার সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল প্রাণ।

মাইশার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায়। মেয়েকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

দুই মেয়ের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ভাড়া বাসায় থাকত মাইশার পরিবার। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শনিবার বিকেলে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় মাইশার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজন, প্রতিবেশী, তার শিক্ষক ও সহপাঠীদের ভিড়।

মাইশার পরিবার জানায়, প্রতিবাদী স্বভাবের মেয়ে ছিলেন মাইশা। কোনো অন্যায় সহ্য করতে পারতেন না। ছিল মানবিক গুণাবলি। গরিব ও অসহায়দের জন্য সব সময় কাজ করার ইচ্ছা ছিল তার। কখনও কখনও ১০ টাকার রিকশা ভাড়া ১০০ টাকাও দিতেন মাইশা। তাই বড় হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল, যেন মানুষের কল্যাণে পাশে থেকে সহযোগিতা করতে পারেন।

মাইশার বাবা নুর মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘মাইশা খুবই সাহসী মেয়ে ছিল। সমাজের জন্য কিছু করার বড় স্বপ্ন ছিল তার। স্কুটি চালানো ছিল তার সবচেয়ে বড় শখ। দুই বছর ধরে স্কুটি কেনার জন্য বায়না ধরেছিল কিন্তু আমি কিনে দিইনি। কারণ আমি ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থা জানতাম।

‘মেয়ের জেদের সঙ্গে পেরে না উঠে এক প্রকার বাধ্য হয়েই স্কুটি কিনে দিয়েছিলাম। করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় উত্তরা সেক্টরের ভেতরেই স্কুটি চালাত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার পর স্কুটি চালিয়েই যাতায়াত করত। কিন্তু সেই স্কুটিই আমার মাইশার জীবন কেড়ে নিল।’

মাইশার সহপাঠী মরিয়ম মোস্তফা মিশু বলেন, ‘মাইশা বড় হয়ে হতে চেয়েছিল উদ্যোক্তা। বন্ধুদের সব সময় বলত, উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও পাশে দাঁড়ানো যাবে।

‘শুধু নিজেই নয়, সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা যাবে। এ জন্য মেডিক্যাল কলেজ বা ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে সে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়।’

মাইশার বাবা নুর মোহাম্মদ মামুন প্রতিষ্ঠা করেন মৌচাক আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেই স্কুল থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পান মাইশা।

স্কুলশিক্ষক মাইনুদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল মাইশা। তার মেধার মূল্যায়ন আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দেখেছি। আমরা শিক্ষক হিসেবে মাইশার জন্য গর্ব করতাম। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মাইশা আমাদের মাঝে নেই।’

বড় বোনকে হারিয়ে রোদসী মমতাজ মৌ বলেন, ‘শুক্রবার সকালে আপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভলেন্টিয়ারের কাজ ছিল। এ জন্য সকাল সকাল বাসা থেকে স্কুটি নিয়ে বের হয়। আমারও ডাক্তারি পরীক্ষা ছিল। যাওয়ার সময় আমাকে দ্রুত বের হতে বলে যায়। আমি পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে জানলাম আপু আর নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর