ঢাকা থেকে টরন্টো যাওয়ার পথে তৃতীয় কোনো গন্তব্যে বিরতি নিয়ে যাত্রী পরিবহন ও জ্বালানি নেয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ফ্লাইটকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করতেই সাজানো হচ্ছে এ পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক গন্তব্যকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭০ যাত্রী নিয়ে উড়াল দেয় বিমানের প্রুভেন (পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক) ফ্লাইট। ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে টানা সাড়ে ১৮ ঘণ্টা আকাশে থেকে কানাডায় পৌঁছায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে একটানা এতক্ষণ আকাশে ওড়ার নজির আর নেই। বিশ্বেও এমন নজির খুব কমই রয়েছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই ফ্লাইটটি আরও লাভজনক করতেই আমরা এ পরিকল্পনা করছি। আমি বলছি না যে, আমাদের সরাসরি ফ্লাইট করার যে সিদ্ধান্ত ছিল, সেটি লাভজনক ছিল না, কিন্তু আমরা চিন্তা করছি এটিকে কীভাবে আরও লাভজনক করা যায়।
‘আর এ জন্য ইউরোপ বা এশিয়ার কোনো একটি পয়েন্টে স্টপওভার ও রিফুয়েলিং করা যায় কি না, সেটা আমরা বিবেচনা করছি। কানাডায় আমাদের যে প্রবাসীরা আছেন, তাদের পাশাপাশি আমরা বিদেশিদেরও ফ্লাইটে আনার চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, ঢাকা থেকে টরন্টো যাওয়ার সময় স্টপওভারের কথা চিন্তা করা হলেও ফেরার সময় ফ্লাইটটি সরাসরিই আসবে।
ঢাকা থেকে টরন্টোর আকাশপথে যে দূরত্ব এটিকে এভিয়েশনের পরিভাষায় বলা হয় আল্ট্রা লং হউল। বিশ্বে এই ধরনের গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চলার নজির খুব একটি নেই।
এয়ারলাইনসগুলো সাধারণত তৃতীয় কোনো গন্তব্যে স্টপওভার করেই ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর একটি বড় কারণ, এ ধরনের দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে উড়োজাহাজে পর্যাপ্ত জ্বালানি বহন করতে হয়। বাড়তি জ্বালানি বহন করার কারণে উড়োজাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কমিয়ে রাখা হয় যাত্রীসংখ্যা। এভিয়েশনের পরিভাষায় এটিকে বলে লোড প্যানাল্টি।
ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৬ ঘণ্টা। এই রুটে বিমান ব্যবহার করতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এই উড়োজাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ অন্য উড়োজাহাজের তুলনায় অন্তত ২০ শতাংশ কম। আর এ কারণে এগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে একটানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে উড়তে পারে।
সাড়ে ১৮ ঘণ্টা উড়াল দিয়ে বিমানের যে উড়োজাহাজটি টরন্টোয় গিয়েছিল, এই পথ পাড়ি দেয়ার জন্য সেটিতে বহন করা যেত সর্বোচ্চ ১৪০ যাত্রী। অথচ বিমানের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৯৮ জন।
১৬ ঘণ্টায় টরন্টো পৌঁছানোর রুট ব্যবহার করে যদি এই উড়োজাহাজটি দিয়ে সরাসরি টরন্টো ফ্লাইট করা হতো, তাহলে সেখানে সর্বোচ্চ বহন করা যেত ২৩০ যাত্রী।
কোন গন্তব্যগুলো স্টপওভারের জন্য বিবেচনা করছেন জানতে চাইলে বিমানের এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এটি অ্যাসেস করতে হবে, তবে এমন একটি গন্তব্য আমরা বিবেচনা করতে চাই যেখান থেকে কম দামে ফুয়েল কেনা যাবে। পাশাপাশি সেটিকে বহন করতে আমাদের খরচ কম হবে। সেটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।’