বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দেয়ার পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে ছাত্রদল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করে বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেছেন, ‘তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বাজে মন্তব্য ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে পুলিশের ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম এবং আইজিপি বেনজির আহমেদের বক্তব্যের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন থেকে নেতাকর্মীদের মিছিল শুরু হয়। নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয়।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে বিএনপি হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নানা কটাক্ষের পর বিএনপি নেতারা কয়েক মাস এ নিয়ে আর কিছু বলেননি। এবার স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে আবার এই কথাগুলো তুলেছেন ফখরুল।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামও বিএনপির এই দাবি নিয়ে কথা বলেছেন শনিবার। পুলিশের একটি আয়োজনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা পার্টির সিনিয়র নেতারা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এটা হাস্যকর। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করেছিল পাকিস্তানের ওখানে কী করছ...। সেটা আর না বলি। কিন্তু সত্য জিনিস যেটা সেটা কিন্তু দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
অন্যদিকে বাংলাদেশে পোশাক খাতের জিএসপি সুবিধা বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায় বেগম খালেদা জিয়ার নিবন্ধের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘রাজনীতি করেন জনগণের জন্য। আবার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নেন। আপনারা কারা? হু আর ইউ? কী চান আপনারা?’
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়িতে আমাদের পুলিশ বাহিনী প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা সব সময়ই ছিল। কিন্তু বর্তমান পুলিশের আইজি এবং ডিএমপি কমিশনার হালুয়া রুটির লোভে সমগ্র পুলিশ বাহিনীতে অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
‘তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পুলিশের পোশাক পরে রাজনৈতিক নেতার ভাষায় কথা বলছেন। ছাত্রদল ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে দলবাজ পুলিশদের প্রতিরোধ করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে আজ ফ্যাসিস্ট অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরে পরিণত করেছে কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই।'
পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশ বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে অচিরেই সাধারণ জনগণ এ ধরনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসবে।’
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে পুলিশপ্রধান এবং ডিএমপি কমিশনার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশের আপামর জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। অবিলম্বে তাদেরকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
ছাত্র সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহ-সভাপতি মামুন খান, যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান, তবিবুর রহমান সাগর, করিম প্রধান রনি, মারুফ এলাহি রনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আকতার হোসেন, নাছিরউদ্দিন নাছির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।