বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাম বেঁধে দেয়ায় ‘অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের’ হাহাকার

  •    
  • ২৩ মার্চ, ২০২২ ১৪:৫৩

এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় থাকা গ্যাসের যে ট্যাবলেট ২ টাকার নিচে পাওয়া যেত, সেটি বাজারে না ছেড়ে এখন ৫ থেকে ৮ টাকার ওষুধ ছাড়া হয়েছে। এ রকম প্রায় প্রতিটি ওষুধের ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে।

দেশের মানুষের নিত্যদিন লাগে এমন ২৮৬টি ওষুধকে এসেনশিয়াল ড্রাগস বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ চিহ্নিত করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর মধ্যে ১১৭টির মূল্যও বেঁধে দেয়া আছে।

তবে এগুলো কাগজে কলমেই। দাম বাড়াতে পারবে না বলে ওষুধগুলো বানাচ্ছেই না কোম্পানিগুলো। ফলে এর সুফল পাচ্ছে না জনগণ।

এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০টি ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ পাওয়া যায়নি। ২৮৬টির মধ্যে বাজারে আছে ১০ থেকে বড়জোর ১৫টি।

ফার্মেসি থেকেই তথ্য পাওয়া গেল, এই তালিকার থাকা প্রায় সব ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। আবার এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় থাকা ওষুধের উপাদানের সঙ্গে নতুন কিছু উৎপাদন যুক্ত করে বাজারে ছাড়া হয়েছে ওষুধ। তবে তা কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকাভুক্ত ওষুধ বিভিন্ন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০টি ফার্মেসিতে পাওয়া যায়নি। ফাইল ছবি

যেমন এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় থাকা গ্যাসের যে ট্যাবলেট ২ টাকার নিচে পাওয়া যেত, সেটি বাজারে না ছেড়ে এখন ৫ থেকে ৮ টাকার ওষুধ ছাড়া হয়েছে। এ রকম প্রায় প্রতিটি ওষুধের ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হয়। তবে স্বাধীনতার পর মাত্র তিনবার নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ করা হয়েছে আট বছর আগে। এই তালিকা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এ নিয়ে কোনো উদ্যোগই নেই।

স্বাধীনতার ১১ বছর পর ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো এই তালিকা প্রথম তৈরি হয়। এর ১৪ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায়, তারও এক যুগ পর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার এবং এরও ৮ বছর পর ২০১৬ সালে তৃতীয়বার এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়।

গত ছয় বছর কোনো তালিকা না করায় স্বল্প মূল্যে নিত্যদিনের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেক কোম্পানি অন্য নামে বা বাড়তি কিছু উপাদন মিশিয়ে ওষুধ বানিয়ে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে। এতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধগুলো কিনতে সাধারণ মানুষকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাজারে এসব ওষুধের সরবরাহ সংকট থাকায় চিকিৎসকরাও ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন না।

কোম্পানিগুলোর দাবি, তালিকাটিতে ‘অবাস্তব’ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যে কারণে তারা এসব ওষুধ তৈরিতে আগ্রহী নয়।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দফায় দফায় কাঁচামালের দাম বাড়ছে। সরকারের কাছে ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। যে কারণে হয়তো কিছু কোম্পানি ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে, কিছু ওষুধের কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে বাজারে এসেছে।’

গত ছয় বছরে এসেনশিয়াল ড্রাগসের কোনো তালিকা না করায় স্বল্পমূল্যে নিত্যদিনের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় থাকা মেডিসিনে কোম্পানিগুলোর তেমন লাভ হয় না। যে কারণে অন্য নামে দাম বৃদ্ধি করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। সরকার ও ওষুধ প্রশাসনের লোকও এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানে। আসলে সাধারণ মানুষের চিন্তা কেউ করছে না।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮২ সালে যখন এসেনশিয়াল ড্রাগের তালিকা তৈরি করা হলো, তখন বলা হলো, শুধু দেশি কোম্পানিগুলো এই ওষুধ উৎপাদন করতে পাবে। সরকার একটি দামও নির্ধারণ করে দিল। তখন দেশীয় বেশ কিছু কোম্পানি আকাশচুম্বী ব্যবসা করতে শুরু করল। বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেল। এখন সরকারের ও ওষুধ প্রসাশনের উচিত এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ফারুক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুয়ায়ী দুই বছর পরপর এই তালিকা করার কথা থাকলেও আমাদের দেশে সেটা সম্ভব হয় না। একই প্যারাসিটামল বেশকিছু উপাদান বেশি দিয়ে এখন বাজারে অন্য নামে এসেছে। দামও বেশি।

‘সরকারের উচিত হবে নতুন যে নামে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বাজারে এসেছে, সেটি এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকায় যুক্ত করা এবং সুনির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেয়া।’

তবে এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোনো চিন্তাই নেই। সরকারি সংস্থাটির উপপরিচালক আশরাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসেনশিয়াল ড্রাগের তালিকায় থাকা ওষুধ থেকে অনেক ভালো ওষুধ বাজারে চলে এসেছে। আগে নাপা খেলেই জ্বর ভালো হয়ে যেত, এখন হচ্ছে না। নাপার চেয়ে অনেক ভালো মানের ওষুধ বাজারে এসেছে। চিকিৎসকরাও যে ওষুধে রোগ ভালো হচ্ছে, সেই ওষুধ বেশি দেন তারা।’

এই তালিকা হালনাগাদ করে জনগণকে সুলভ মূল্যে কিছু ওষুধ পাওয়ার সুযোগ কেন করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা করার জন্য ওষুধ কোম্পনিগুলোর মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।’

এ বিভাগের আরো খবর