বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উত্তরণ-পরবর্তী ওষুধশিল্পের সংকট কোথায়

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২২ ০৮:৩৬

ওষুধশিল্পে গর্ব করার মতো অনেক কিছু থাকলেও দেশে এখনও জাতীয় পর্যায়ে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কোনো গবেষণা কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। উত্তরণের পর সক্ষমতার প্রশ্নে এটি একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেবে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের ওষুধশিল্প নানামুখী সংকটে পড়তে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় ওষুধশিল্পের যে ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার, তা হয়নি।

দেশে ওষুধ তৈরিতে বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল ব্যবহার হচ্ছে। এ কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি হয়। দেশে কাঁচামাল তৈরির জন্য যে শিল্পাঞ্চল (এপিআই পার্ক) গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব আছে। ফলে এর টেকসই হওয়া নিয়েও আছে সংশয়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সরাসরি প্রভাব পড়বে ওষুধের দামে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ ওষুধে আর মেধাস্বত্ব ছাড় পাবে না। তখন ওষুধের ফর্মুলা পেটেন্টকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বেশি মূল্যে কাঁচামাল কিনতে হবে।

ফলে দেশে ওষুধের উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং দামও বেড়ে যাবে। এতে ওষুধের ক্রয়ক্ষমতা স্থানীয় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। রপ্তানি বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ২০৩৩ সালে বাংলাদেশ ওষুধে আর মেধাস্বত্ব ছাড় পাবে না। তখন ওষুধের ফর্মুলা পেটেন্টকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বেশি মূল্যে কাঁচামাল কিনতে হবে। ছবি: বেক্সিমকো ফার্মা

এদিকে ওষুধশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা এবং চালু হতে যাওয়া এপিআই পার্কের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবকেও উত্তরণের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ মজিদ এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেনেরিক ওষুধের কাঁচামাল তৈরির প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সহজ করতে পারে জাতীয় পর্যায়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেশী ভারতসহ প্রতিযোগী দেশগুলো কয়েক দশক আগেই এ ধরনের জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।

‘ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। ওষুধশিল্পে গর্ব করার মতো অনেক কিছু থাকলেও দেশে এখনও জাতীয় পর্যায়ে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির কোনো গবেষণা কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। উত্তরণের পর সক্ষমতার প্রশ্নে এটি একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেবে।’

দেশে ওষুধশিল্পের কাঁচামাল তৈরির জন্য যে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব আছে। ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, ‘এপিআই পার্কে কোম্পানিগুলো যাচ্ছে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য। কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাখা হয়নি। এটি ছাড়া এপিআই পার্কের কাযকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

‘আবার সেখানে কম জায়গায় অনেক কোম্পানি বেশি কাঁচামাল উৎপাদন করবে। ভবিষ্যতে যখন কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দরকার হবে, তখন বাড়তি জায়গা না পেলে কোম্পানিগুলোর জন্য এপিআই পার্ক টেকসই হবে না, যা ওষুধশিল্প মালিকদের বাড়তি বিনিয়োগের ঝুঁকি তৈরি করবে।’

এ ছাড়া আরেকটি সংকট হলো, ২০৩৩ সালের আগেই যদি কাঁচামাল উৎপাদনে কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা ২০৩৩ পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, বিশ্বের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এখন বায়োটেক ভ্যাকসিনের মতো উচ্চপ্রযুক্তির ওষুধ উৎপাদনে মনোযোগ বাড়িয়েছে। এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে কোম্পানিগুলোকে অনেক বেশি বিজ্ঞানভিত্তিক দক্ষ হতে হয়। এতে তাদের বিপুল অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়।

সাধারণত একটি ভ্যাকসিন বাজারে আসতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগে। ভ্যাকসিনটি সুস্থ মানুষের জন্য নিরাপদ কি না তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এত দীর্ঘ সময় ব্যয় করার দরকার হয়।

এই বায়োসিমিলার ওষুধ তৈরির জন্য দেশে পৃথকভাবে যে মৌলিক গবেষণা হওয়া দরকার তার ঘাটতি দূর করাও বিরাট চ্যালেঞ্জ। পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা যখন থাকবে না, তখন নিজস্ব উদ্ভাবন না হলে উত্তরণ-পরবর্তী একটা বড় ঝুঁকি তৈরি হবে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে: মৌলিক গবেষণা কাজে উদ্যোক্তারা কি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন?

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে বর্তমানে ১৩টি কন্টাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) অনুমোদন পেয়েছে। মূলত এসব সংস্থার কাজ হচ্ছে ওষুধের গুণগত মান ও কার্যকারিতা যাছাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ওষুধের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক দেশ এখন আর এ ধরনের প্রতিবেদন চায় না। ফলে কন্টাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের হাতে তেমন কাজ থাকে না।

ড. মজিদ মনে করেন, সিআরওগুলো সচল না থাকলে সেটা ভবিষ্যতে দেশের ওষুধশিল্পের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করতে হলে ওষুধশিল্পের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক মনে করেন, ২০৩২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য মেধাস্বত্বের ছাড়ের সুবিধার মেয়াদ আছে। এ সময় পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হতে পারে ২০৩৩ সালের পর। কারণ এরপর আর পেটেন্ট সুবিধা থাকবে না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক, এমন একটা ওষুধ বানানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ল, যেটা পেটেন্ট ছাড়ের সুবিধা পেল না। তখন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর থেকে উত্তরণের জন্য ২০৩২ সালের পরও বাংলাদেশের জন্য পেটেন্ট সুবিধা বহাল রাখতে হবে। এ জন্য সরকারকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে শিল্পের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কাঁচামালের সিংহভাগ যাতে দেশেই উৎপন্ন হয়, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ওষুধশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই কম। এ খাতে প্রচুর এফডিআই আনতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর