ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই)’ বা ‘ওষুধ শিল্প পার্ক’ নির্মাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক যুগ আগে। এখন সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলছে।
রাজধানী থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ২১৬ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই শিল্প পার্কের ‘সরকারি অংশের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ’ শেষ হলেও উৎপাদন শুরু হয়নি এখনও।
প্রকল্প এলাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২১৬ একর জমিতে ৪২টি প্লট ২৭টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে ২০১৭ সালে বুঝিয়ে দেয়া হলেও মাত্র দুটি কোম্পানির কারখানা দৃশ্যমান। দুটির আংশিক কাজ হয়েছে। বাকিগুলোর ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরুই হয়নি এখনও।
প্লট বরাদ্দ পাওয়া অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কবে নাগাদ কারখানা নির্মাণ করে উৎপাদনে যাবে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান দাবি করেছেন, ওষুধ শিল্প পার্ক পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাবে আগামী এক বছরের মধ্যে।
ওষুধ শিল্প পার্ক সরেজমিন পরিদর্শনকালে নিউজবাংলা কথা বলেছে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তারা বলেছেন, সরকারের যে দায়িত্ব ছিল অবকাঠামোর উন্নয়ন করা, তা শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। এখন নিজস্ব কারখানা স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি অংশের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন উদ্যোক্তাদের অংশের কাজ বাকি। তারা দ্রুত কারখানা স্থাপন করলে উৎপাদনে যাওয়া সহজ হবে।’
তিনি জানান, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়। এখন করোনার ভয় কেটে গেছে। সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে কাজের গতি এসেছে। অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান। শিগগিরই উৎপাদনে যাবে তারা।
সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্সাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক, প্লট বরাদ্দ পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও এপিআইতে যায়নি। তার মানে এই নয় যে তারা এপিআইতে কারখানা করছে না। অগ্রগতির শেষ ধাপে রয়েছি আমরা।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে কিছু কিছু শিল্প ইউনিট তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে বড় চারটি শিল্প ইউনিট তাদের অবকাঠামো নির্মাণ শেষে জুনের মধ্যে ট্রায়ালে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
২০২৩ সালের প্রথম দিকেই এপিআই পার্ক পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
দেশীয় ওষুধ শিল্পের প্রসার, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, ওষুধের মান উন্নয়নে গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেন বাংলাদেশেই উৎপাদন করা যায়, সেই লক্ষ্যে ২০০৮ সালে দেশে একটি আলাদা ওষুধ শিল্প পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়।
শুরুতে ওষুধ শিল্প পার্ক বানাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১৩ কোটি টাকা, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া এবং নানা জটিলতার কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বেড়েছে।
শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিন দফা সংশোধন হয় এ প্রকল্পের। সবশেষ ব্যয় ধরা হয় ৩৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেয়া ৩০১ কোটি টাকা ব্যয় হয় মূল প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে। আর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি নির্মাণেই বরাদ্দ দেয়া হয় ১২০ কোটি টাকা। ওষুধ কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির অর্থে নির্মাণ হয় সিইটিপি।
এপিআই পার্কের অবকাঠামো কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো কেন কারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসছে না, তা জানতে চাইলে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান সিনহা বলেন, ‘এপিআই পার্ক বড় ব্যয়বহুল ইন্ডাস্ট্রি। দেশে এপিআই পার্ক নতুন, তবে বিনিয়োগের ঝুঁকিটাও কম নয়। অনেকে হয়তো সেই ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঝুঁকির কথা চিন্তা না করেই এগিয়ে এসেছি। আশা করছি বাকিরাও শিগগিরই চলে আসবে, তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়েছেন।’
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাটি ভরাট, রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, অ্যাপ্রোচ রোড, বিদ্যুৎ সংযোগ, পানি সরবরাহ, গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন, ড্রেন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, ওষুধ শিল্প পার্ক চালু হলে এখান থেকে শতভাগ কাঁচামাল উৎপাদন করা যাবে। ফলে ওষুধ সস্তা হবে। এটি উৎপাদনে গেলে সরাসরি কর্মসংস্থান হবে ২৫ হাজার লোকের।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হেলথকেয়ার এবং একমি ল্যাবরেটরিজের কারখানার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। তাদের নিজস্ব অবকাঠামো শেষ হওয়ার পথে।
যন্ত্রপাতিও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
হেলথকেয়ার ২০১৯ সাল থেকে এখানে তাদের নিজস্ব অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে তারা ল্যাবরেটরি এবং গবেষণার কাজ সম্পন্ন করেছে।
গত নভেম্বর থেকে ‘পরীক্ষামূলক উৎপাদন’ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তারা জানান, নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে তারা ওষুধের তিনটি কাঁচামাল উৎপাদনের পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন।
হেলথকেয়ার কেমিক্যালস লিমিটেডের এপিআই প্রকল্পের সহকারী ব্যবস্থাপক হাসিবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, দুই মাসের মধ্যে তারা পাইলট উৎপাদনে যাবেন। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাবেন এ বছরের ডিসেম্বরে।
এখানে ৪০টি ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করবে হেলথকেয়ার। সেগুলো নিজেরাই পেটেন্ট করে নেবে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব’ (ট্রিপস) আইনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের পেটেন্ট ছাড় পেয়ে আসছিল ৯৫ ভাগ ওষুধের ক্ষেত্রে। এ কারণে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সস্তায় ওষুধ উৎপাদন করতে পারছে।
২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটলে এই সুবিধা আর থাকবে না। তখন ওষুধ উৎপাদনে বিদেশি পেটেন্ট ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রয়ালটি বা ফি দিতে হবে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়তে পারে ওষুধের দামের ওপর।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে নিজেদের কাঁচামাল তৈরি করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন দ্রুত ওষুধ শিল্প পার্ক চালু করা।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর।
পরিসংখ্যান বলে, বাংলাদেশ যদি কাঁচামালও উৎপাদন করতে পারে, তবে বছরে প্রায় ৭ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয় করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন ড. আ ব ম ফারুক বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর আমাদের কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সমস্যা হতে পারে ২০৩৩ সালের পর। তার আগেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
হেলথকেয়ারের এপিআই প্রকল্পের সহকারী ব্যবস্থাপক হাসিবুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ তার আগেই ওষুধ শিল্প পার্ক উৎপাদনে যাবে।’
একই মন্তব্য করে ওষুধ শিল্প পার্কের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শহীদুল ইসলাম বলেন, এলডিসি উত্তরণের আগেই এপিআই উৎপাদনে যাবে।
কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের কাজ প্রায় শেষ
পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে প্রকল্প এলকায় দুই ইউনিটের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইপিটি) নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয় ১২০ কোটি টাকা। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রেমকি এনভায়রো সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এটি নির্মাণ করছে।
প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শচিন ওটারকার জানান, প্রথম ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ। আট মাস পর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে। দুই ইউনিটের কাজ শেষ হলে সিইপিটি থেকে বর্জ্য শোধন করা যাবে দৈনিক ২০ লাখ লিটার।
এপিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সার্ভিসেস লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, এই সিইপিটির মাধ্যমে ‘শূন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিশ্চিত করা হবে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য