ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নাপা সিরাপের একটি ব্যাচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর মানে কোনো সমস্যা পায়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরে করা এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার দুপুরে এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ এ তথ্য জানান।
মহপরিচালক বলেন, ‘বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নাপা সিরাপের ব্যাচ নং-৩২১১৩১২১- ৬৮ হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও এই সিরাপের মান সঠিক ছিল।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ খেয়ে দুই ভাই ইয়াসিন ও মুরসালিনের মৃত্য হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। এ ঘটনার পর থানায় অভিযোগ করেন শিশুদের বাবা সুজন।অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা সিভিল সার্জন। জেলায় ওই সিরাপ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি।
এরপর নির্দিষ্ট ব্যাচের নাপা সিরাপ শনাক্ত করে সেগুলো দ্রুত নিকটস্থ কেমিস্ট অফিসে জমা দিতে জেলা ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ‘আশুগঞ্জে নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনায় আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ইমরান হোসেনকে সেখানে পাঠাই। তিনি স্থানীয় পুলিশ, ওষুধ সমিতির সদস্য, সিভিল সার্জনসহ মা ফার্মেসিতে (যেখান থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল) অভিযান চালান। ওখান থেকে নমুনা হিসেবে ৮টি সিরাপ সংগ্রহ করেন। আমরা সেগুলো পরীক্ষার জন্য আনি। এ ছাড়া আমরা আরও দুটি টিম পাঠাই।‘একটি টিম ঘটনাস্থল এবং অন্যটি কারখানা পরিদর্শন করে। এরপর আমার একটি চিঠি লিখে স্থানীয় পর্যায় থেকে ওই ব্যাচের নমুনা তুলে আমাদের কাছে পাঠাতে বলি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বেক্সিমকোকে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলি। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের ওই ব্যাচে ৮২ হাজার বোতল সিরাপ তৈরি হয়েছিল। সেগুলো বাজারজাত করা হয়েছে, তবে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। ঘটনার পর তারা আবার নমুনা পরীক্ষা করেও কোনো সমস্যা পায়নি। সিরাপের গুণগত মান ঠিক ছিল।
‘এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে যারা ছিলেন তার বলেছেন, সিরাপের কারখানার মান নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন সন্তোষজনক। দোকান থেকে ৮ নমুনার মধ্যে ৩ নমুনার পরীক্ষার ফল আমাদের হাতে এসেছে। এটির মান সঠিক আছে।’
যে সিরাপ খেয়ে দুই শিশু মারা গেছে এটা বেক্সিমকোর ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ওই সিরাপের বিষয়ে আমরা বলতে পারছি না। কারণ সেটা আমাদের কাছে আসেনি। ওটা পুলিশের কাছে আছে। মা ফার্মেসি থেকে আমরা যে ৮টি সিরাপ পেয়েছি, সেগুলো আমরা পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছি। একই ব্যাচের সিরাপের নমুনা পরীক্ষা করে মান সঠিক পাওয়া গেছে।’
দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি সংস্থার মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই এটা পরিষ্কার হবে।’
ঘটনার পর সিরাপের মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, সেই সংশয় দূর করতে এই সংবাদ সম্মেলন বলেও জানান মোহাম্মদ ইউসুফ।