বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অনিয়মে ভেঙে ফেলা হলো আশ্রয়ণের ১৬০ ঘর

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২২ ২০:৫০

গাজীপুর সদরের তিন ইউনিয়ন ও মহানগরীর কাশিমপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে প্রতিটি বিমে রড থাকার কথা চারটি। কিন্তু কোনো বিমে দেয়া হয়েছে একটি, কোনোটিতে রডই নেই। কলামের পিলারে ১৬ মিলিমিটারের চারটি রড দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ১০ মিলিমিটারের দুটি রড।

মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১৬০টি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। গাজীপুর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছিল। এখন নির্দেশিত উপকরণে যথাযথ নিয়ম মেনে ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি বিমে রড থাকার কথা চারটি। কিন্তু কোনো বিমে দেয়া হয়েছে একটি, কোনোটিতে রড ব্যবহারই করা হয়নি। কলামের পিলারে দেয়ার কথা ছিল ১৬ মিলিমিটারে চারটি রড। দেয়া হয়েছে ১০ মিলিমিটারের দুটি।

নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে নয়ছয়ের কারণে বাঁশ দিয়ে ঠেলা দিতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে দেয়াল। সামান্য আঘাতে ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয় পাকা মেঝে। দুর্বল পাতলা প্লেইন শিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘরের দরজা-জানালা।

মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে এমন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে নির্মাণাধীন ১৬০টি ঘর।

গাজীপুর সদরের পাতিলবান্দা এলাকায় প্রকল্পের ঘর ভেঙে ফেলার পর পড়ে থাকা নির্মাণসামগ্রী। ছবি: নিউজবাংলা

ভেঙে ফেলা ঘরগুলো মানসম্মত উপকরণ দিয়ে পুনরায় তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি এস এম সাদিক তানভীর।

প্রকল্পের সদস্যরা হলেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাকিল হোসেন (সদ্য বিদায়ী), উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ উজ্জ্বল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের ডিসেম্বরে খাস জমিতে ঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তার মধ্যে বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা গ্রামে ছয়টি, খুন্দিয়া গ্রামে ৯টি, ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া খালপাড় এলাকায় ১৫টি, পিরুজালী ইউনিয়নের পাতিলবান্দা এলাকায় ৬০টি, মহানগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাশিমপুর গোবিন্দপুর এলাকায় ১৭টি ও হাতিমারা এলাকায় আটটি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াবো এলাকায় ১৪টি ঘর নির্মাণ হচ্ছিল।

১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রশস্ত প্রতিটি পাকা ঘরের সঙ্গে একটি করে রান্নাঘর ও টয়লেট থাকার কথা রয়েছে। প্রতি ১০টি ঘরের জন্য থাকবে একটি নলকূপ। ইট, সিমেন্ট এবং বালুর পরিমাণও নকশা মোতাবেক নির্ধারণ করা ছিল।

প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। কাজ শুরুর পর থেকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, বিম ও কলামে রড কম দেয়া এবং সিমেন্ট কম দেয়ার অভিযোগ ওঠে। সামান্য আঘাতেই খসে পড়তে থাকে ইট। তা ছাড়া কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঘরের মেঝে দেবে ও ফেটে যেতে থাকে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও কাজ বন্ধ হয়নি।

এভাবে একের পর এক অভিযোগ ও সমালোচনার মাঝে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লোকজন নিয়ে গত তিন-চার দিনে সব ঘর ভেঙে দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছিল।

প্রকল্পকাজ তদারকিতে প্রশাসনের গা-ছাড়া আচরণের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, ঘর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কমিটির কাউকে প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়নি। নির্মাণ শ্রমিকও ছিল বহিরাগত।

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুসল্লি বলেন, ‘প্রকল্পের কোনো কাজেই আমাকে ডাকা হয়নি। সবকিছু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তারা করেছেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ উজ্জ্বলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাদিক তানভীর জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন গিয়ে ঘরগুলো মানসম্মতভাবে নির্মাণ হয়নি দেখে ভেঙে ফেলা হয়েছে। নির্ধারিত নকশা ও নির্মাণসামগ্রী দিয়ে শিগগিরই ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর