বরিশাল নগরীতে ঘর থেকে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা আত্মহত্যা নয়, হত্যা বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। সাদিয়া আক্তার সাথী নামে ওই নারীকে তার স্বামী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সেই অভিযোগ লিখিত আকারে মঙ্গলবার কোতোয়ালি মডেল থানায় জমা দিয়েছেন সাথীর বাবা সিরাজুল হক মৃধা।
তিনি জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে লাপাত্তা মাইনুল। পাওয়া যাচ্ছে না সাথীর ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা মেয়েটিকেও।
বরিশাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়ায় একটি ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে সোমবার দুপুরে উদ্ধার করা হয় সাথীর ঝুলন্ত দেহ। এর আগে সকালে একমাত্র সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসেন তিনি।
সিরাজুল জানান, তার মেয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থী ছিলেন। আগের সংসারে মেয়ের ৮ বছরের সন্তান আছে। প্রায় এক বছর আগে মাইনুলের সঙ্গে নতুন সংসার শুরু করেন সাথী।
লিখিত অভিযোগে সিরাজুল জানান, বিয়ের পর সাথী ও মাইনুল বরিশালেই বাসা ভাড়া করে থাকতেন। পরে সাথী সাবলেটে থাকতে শুরু করেন। তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছেন মাইনুল। সেই টাকা ফেরত চাইলে নির্যাতন করা হতো।
মাইনুলের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর বাদুরী গ্রামে।
সিরাজুল হক বলেন, ‘সাথী আত্মহত্যা করলে ওর ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে আটকানো থাকার কথা। পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা পেয়েছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমি চাই আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। যদি আত্মহত্যা করত, তাহলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসতো কেন?
‘আমার ধারণা সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল সাথী। তখন তাকে নির্যাতন করে মারধর করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে মাইনুল। সাথীর সঙ্গে স্বর্ণালী নামে একটা মেয়ে সাবলেটে থাকত। ঘটনার পর তাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করতে পারে।’
সাথীর দুলাভাই বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী বলেন, ‘সাথীর আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। কিছুদিন আগে ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে মাইনুল ১৩ লাখ টাকা নেয়। পরীক্ষা দেয়ার পরে চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চায় সাথী। প্রথম অবস্থায় ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন না। পরে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকও দাবী করেন মাইনুল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল।
‘হত্যার আগের দিন রোববার মাইনুল বাসায় এসেছিল। সাদিয়ার মেয়ে সাইমুন আমাদের জানিয়েছে, মাইনুল এসে ঝগড়া করে এবং সাদিয়াকে মারধর করে। তাছাড়া মাইনুলই আমাদের সবাইকে কল করে জানায় সাদিয়া আত্মহত্যা করেছে। আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। লাশ উদ্ধারের সময়ে কোতোয়ালি থানার এসআই সাদিয়ার লেখা একটি ডায়রি, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন। সেগুলোতে কী আছে তা আমরা দেখতে চেয়েছি, তা কিছুই দেখায়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাইনুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
লাশ উদ্ধারকারী উপপুলিশ পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ‘সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি সাথীর স্বামী চাকরি করেন। কী চাকরি করেন তা জানতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার সকালে জানতে পেরেছি মাইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করেন।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, সাথীর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।