রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় শিশু গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে নির্যাতনের মামলায় দম্পতিকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম রশিদুল আলমের আদালত জামিন নাকচ করে গৃহকর্তা এজাজ সাকলাইন এবং তার স্ত্রী তানজিমা হাসেমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এর আগে এক দিনের রিমান্ড শেষে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আলী সৈকত।
আসামিদের পক্ষে সাজেদুল ইসলাম ভুঁইঞা জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
ভাটারা থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার (নারী-শিশু) কর্মকর্তা এসআই রাফাত আরা সুলতানা বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
গত ৬ মার্চ এ দম্পতিকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
জানা যায়, এজাজ সাকলাইনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত লিজা আক্তার। এজাজ ও তার স্ত্রী শিশু লিজাকে মারপিট করতেন।
গত ২ মার্চ তারা লোহার খুন্তি গরম করে লিজার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দেন। পরে লিজা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
৫ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিবেশীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ডি-ব্লকের ১৯৩ নম্বর বাসায় যায়। সেখানে লিজাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছিল।
পুলিশ লিজাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে পাঠায়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
এ ঘটনায় ভাটারা থানার উপপরিদর্শক হাসান মাসুদ মামলা করেন।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘উদ্ধারে সহযোগিতার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে এসআই হাসান মাসুদ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্লক-বি-এর ৪ নম্বর সড়কের ১৯৩ নম্বর বাসায় যান। বাসার বাথরুম থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু লিজাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করেন।’
সাজেদুর রহমান জানান, শিশু লিজার বাড়ি ময়মনসিংহের রহমতপুর গ্রামে। গত ৭ নভেম্বর মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে লিজা ওই বাসায় কাজে যোগ দেয়। এরপর থেকে সামান্য বিষয়েও ওই দম্পতি শিশুটিকে শারীরিক নির্যাতন করা শুরু করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি স্বামী-স্ত্রী দুজনে লিজাকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করেন। এ সময় তানজীমা হাসেম চুলায় খুন্তি গরম করে লিজার হাত, পা, মুখ, পিঠ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে জখম করেন।’
লিজার মাথার বাম দিকের চুল টেনে তুলে ফেলা হয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘তানজীমার স্বামী এজাজ শিশুটিকে রড দিয়ে পেটান। দিনভর অত্যাচারে শিশু লিজা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। তিন দিন শুধু পানি খেয়ে ছিল লিজা।’
ওসি বলেন, ‘লিজাকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে।’