বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইয়াবা সরিয়ে আইসের দাপট, আসছে সাগরপথে

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২২ ০৯:১৯

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান বলেন, ‘নানা কৌশলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মাদক নিয়ে আসছে। বেশি লাভের আশায় তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করেছে।’

পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যবর্তী নৌপথ দিয়ে দেশে আসছে ভয়ংকর মাদক আইস। বহন করা হচ্ছে আচার, কাপড়ের প্যাকেট কিংবা চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেটে।

টেকনাফে কয়েক স্থানে মজুত করা হয় আইসের এসব চালান। এরপর সুযোগ বুঝে বিভিন্ন যানবাহনে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। বিপুল পাচারের কারণে বর্তমানে ইয়াবার বাজারটি আইসের দখলে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন কক্সবাজারে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা।

বিজিবি ও র‌্যাব ছাড়াও পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন অভিযানে ১ জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ৪১ কেজির বেশি আইস জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি।

র‌্যাব বলছে, চক্রের সদস্যরা মিয়ানমার থেকে দেশে আইস ও ইয়াবা মূলত সাগরপথে পাচার করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদকচক্রের সদস্যরা বাংলাদেশি চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগর পথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর জন্য একেকটি চক্রের সদস্যরা ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে জেলেদের ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে থাকেন। মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসেন।

সমুদ্রে হাজার হাজার নৌকা মাছ ধরে। এর মধ্যে মাদক বহনকারী নৌকা শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

এভাবে ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়ায় চালান নিয়ে আসে।

হাতিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া/ঢাকার আশপাশে অথবা সুবিধাজনক স্থানে আইস পৌঁছায় চক্রটি। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করা হয় সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান বলেন, ‘নানা কৌশলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মাদক নিয়ে আসছে। বেশি লাভের আশায় তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করেছে। মাদকসেবীর সংখ্যা না কমাতে পারলে কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদক আসবে। সমুদ্রে হাজার হাজার নৌকা মাছ ধরে। এর মধ্যে মাদক বহনকারী নৌকা শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবির বলেন, ‘সর্বপ্রথম আইস মাদকটি ধরা পড়ে ২০০৭ সালে। তারপর ১০-১২ বছর এর অস্তিত্ব আমরা পাইনি। ২০১৯ সালে আবারও এই মাদকের আবির্ভাব ঘটে। তবে বর্তমানে চাহিদা বাড়ার কারণে এটির প্রবেশও বেড়েছে। তাই সীমান্ত এলাকাগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে তল্লাশি চলছে। গত দুই মাসে আমরা ১৪ কেজি আইস উদ্ধার করেছি, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকা।’

সেন্ট মার্টিন উপকূলে মাদক কারবারিদের তৎপরতা ঠেকাতে কাজ করছে কোস্ট গার্ড। বিভিন্ন সময় ইয়াবা ও আইস ধরা পড়লেও ছদ্মবেশ থাকায় আসামি ধরা পড়ছে না।

টেকনাফে বিজিবি-২-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যবর্তী সমুদ্রপথ দিয়ে মালবাহী বোটে করে আসছে ইয়াবা ও আইসের চালান। নিরাপদে মাদকের চালান খালাস করতে ব্যবহার করা হয় লাইট সিগন্যাল। খালাসের পর টেকনাফের বিভিন্ন বাড়িতে মজুত করা হয়। এরপর আচারের প্যাকেট, বিভিন্ন চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেট ও বার্মিজ কাপড়ের প্যাকেটে ঢাকায় আনা হচ্ছে আইস ও ইয়াবার চালান।’

তিনি জানান, নজর এড়াতে প্রতিদিনই নতুন নতুন পন্থা ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। তবে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বিজিবির।

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন উপকূলে মাদক কারবারিদের তৎপরতা ঠেকাতে কাজ করছে কোস্ট গার্ড। বিভিন্ন সময় ইয়াবা ও আইস ধরা পড়লেও ছদ্মবেশ থাকায় আসামি ধরা পড়ছে না। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। এতে ইয়াবার মূল উপাদান অ্যামফেটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই মাদক প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা যায়।

এ বিভাগের আরো খবর